| |
               

মূল পাতা রাজনীতি সরকারের দেশপ্রেমের চেয়ে ভারতপ্রেম অনেক বেশি : চরমোনাই পীর


সরকারের দেশপ্রেমের চেয়ে ভারতপ্রেম অনেক বেশি : চরমোনাই পীর


রহমত ডেস্ক     20 June, 2022     07:37 PM    


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, সরকারের কাছে দেশ ও ইসলামের চেয়েও ভারতের প্রেম বেশি। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে কটুক্তি করার পরও বৃহত্তর ইসলামপ্রিয় জনতার পক্ষে অবস্থান নিতে পারেনি, কেবলমাত্র ভারতপ্রীতি কারণে। সরকারকে মনে রাখতে হবে আপনার দুর্দিনে ভারত আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহর গজব থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই নবীপ্রেমের দৃষ্টান্ত সরকার দেখাতে হবে। শুধু বন্যা পরিস্থিতি না বরং দেশের প্রতিটি খাতই এমন বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। কোন দিক থেকে সামান্য কোন ঝাঁকুনি এলেই এই দেশ ও জনতার ওপরে বিপর্যয় নেমে আসবে। এজন্য দায়ী সরকারগুলোর চরিত্র। এই সরকারগুলো জনতার সেবক নয় বরং এরা হলো জনতার ওপরে ভর করে আখের গোছনো দুর্বিত্ব।

আজ (২০ জুন) সোমবার বাদ জোহর শহরের ঐতিহাসিক আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ময়মনসিংহ বিভাগের উদ্যোগে ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার শানে কটূক্তির প্রতিবাদ, কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দলের তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, জিএম রুহুল আমীন, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, মাওলানা আলমগীর হোসাইন, মুফতী নূরুল ইসলাম, মাওলানা ফারুক আহমদ, ডা. সৈয়দ ইউনুছ আহমদ,মু. আকবার আলী, মুফতী ইয়াকুব সাঈদ, মাওলানা মামুনুর রশিদ, মুফতী গোলাম মাওলা ভূঁইয়া প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

চরমোনাই পীর বলেন, বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সেই দুর্যোগকে বাড়িয়ে তোলে সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আজকে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার জন্য ক্ষমতাসীন সরকার দায় এড়াতে পারে না। প্রাকৃতিক কারণেই ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থ ওঁৎপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। ফলে উভয়ের দেশের নদী, বাঁধসহ পানি ব্যবস্থাপনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ হওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সরকারগুলো ভারতের সাথে এটা-সেটা বহু সম্পর্ক উন্নয়ন করলেও ভারতের পানি নীতি বরাবরই বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। সরকারগুলোও তার কোন প্রতিকার করতে পারে নাই। ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ। সেজন্যই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে নীতি প্রনয়ণ করা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা উচিৎ ছিলো সরকারগুলোর। কিন্তু সিলেটের মানবিক বিপর্যয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের সরকার এই ক্ষেত্রে চুড়ান্ত রকম ব্যর্থ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশের নদ-নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, নাব্যতা হারিয়েছে দেশের প্রায় সকল নদী। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ইদুরে খেয়ে ফেলেছে। হাওরে উন্নয়নের নামে পানির স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। অথচ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোন বিকার নাই। বছরের পর বছর তাদের দুর্নীতি, অযোগ্যতার কারণে পানি সম্পদ আজকে বিপদে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার দেশ ও জনতার জন্য কতটা ক্ষতিকর তা তাদের কর্মকান্ডে বারংবার প্রমানিত হয়েছে। এরা দেশের ভবিষ্যত তারুণ্যকে ধ্বংশ করতে মদকে সহজলভ্য করছে, শিক্ষা থেকে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা তুলে দিচ্ছে। এই সরকার ভোট ব্যবস্থাকে আক্ষরিক অর্থেই হত্যা করেছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। উন্নয়নের নামে হরিলুট করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরের বাংলাদেশ আজ আর্থিকভাবে ভঙ্গুর, প্রাকৃকিতভাবে বিপর্যস্ত। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ইসলাম ছাড়া আর কোন পথ নাই। তাই আসুন! আগামী নির্বাচনে ইসলাম ও মানবতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। কথা দিচ্ছি, পরিস্থিতি বদলে যাবে। বিপদে আপদে আমাদের পাশে পাবেন। আপনাদের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। ইনশাআল্লাহ

তিনি আরো বলেন, রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজ দেশের সাধারণ নাগরিকের কোনো অধিকার নেই, কোনো সম্মান নেই। সব অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। আওয়ামী লীগের সবাই দুর্নীতিবাজ নয়, বিএনপির মধ্যেও ভালো মানুষ আছে। আমরা দেশের সকল নীতিবান, ভালো মানুষ ও আদর্শ নাগরিকদের নিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সংঘাতের নোংরা রাজনীতির অবসান চাই। তাই আগামী নির্বাচন দলের জন্য নয়; সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর দেশের জন্য হোক। আমরা স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ক্ষমতায় যেতে পারি, তাহলে দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা হবে। দুর্নীতি উৎখাত করা হবে। প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার পরিবর্তে সমঝোতা ও সহনশীলতার রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হবে। সুদ, ঘুষ ও অপচয় বন্ধ করা হবে। মাদক, চাঁদাবাজি উৎখাত করব। নারী নির্যাতন ও মানব পাচার প্রতিরোধ করব। দ্রব্যমূল্য মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে রাখতে সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করা হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। দলীয়করণ বন্ধ করা হবে। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতি গ্রহণ করা হবে। সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করব। বেকারত্ব দূর করব এবং কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী ও পেশাজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।