| |
               

মূল পাতা জাতীয় অর্থনীতি আজ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ


আজ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ


রহমত ডেস্ক     09 June, 2022     11:22 AM    


দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে। দেশের ৫১ তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম বাজেটে সংগত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশ কিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজ (৯ জুন) বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় টানা চতুর্থবারের মতো সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। করোনার ধাক্কা সামলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফেরার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২২-২৩ নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। সামনের অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট (অনুদানসহ) হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। আর দেশে সব পণ্যের দাম বাড়ায় আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কিছুটা বাড়িয়ে ৫.৬ শতাংশ করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বাংলাদেশ অনেকটাই আমদানিনির্ভর দেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। রপ্তানিপণ্যের কাঁচামালসহ নিত্যপণ্যের বড় আমদানি করা হয় প্রতিবছর। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্যমতে, গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.২৯ শতাংশ। মার্চে ছিল ৬.২৪ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৬.১৭ শতাংশ। গত দুই বছরে এমন মূল্যস্ফীতি আর ওঠেনি। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ৬.৪৪ শতাংশে। গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির বিপরীতে মজুরি বেড়েছে ৬.১৫ শতাংশ হারে। ফেব্রুয়ারি মাসেও মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.০৩ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ আটটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাজেট প্রণয়নের অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংলাপ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে বাজেটের ওপর প্রস্তাবনা এসেছে। সবার সঙ্গে আলোচনা, তাদের প্রস্তাবনা ও মন্ত্রণালয়ের সার্বিক বিশ্লেষণে আগামী অর্থবছরের জন্য আটটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের ওপর বাজেটে আয়ের সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীলতা থাকবে। আগামী অর্থবছরের ব্যয় মেটাতে নতুন বছরে কর আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর কর থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এবছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। তবে বৈদেশিক অনুদান পরিশোধ করতে হয় না বিধায় সেটিকে সরকারের আয় মনে করা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন খাতে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বেশি ধরে বেতন-ভাতায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। আগামী বছর ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৬৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এছাড়াও ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য জায়গা থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদখাতে ব্যয় হবে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এদিকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির কারণে সেসব পণ্যে বেশি করে ভর্তুকি দেওয়া হবে। বিশেষ করে সার, খাদ্যপণ্য, বিদ্যুৎ, রপ্তানিপণ্য ও রেমিট্যান্সসহ অন্যান্য খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ব্যয় করা হবে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে মূলধনীয় ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন স্কিমে ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, কাজের বিনিয়ময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে (এডিপি বহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।