| |
               

মূল পাতা জাতীয় তামাকপণ্যের প্রকৃত মূল্য কমবে, তরুণদের মধ্যে ব্যবহার বাড়বে


তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া ২০২২-২৩

তামাকপণ্যের প্রকৃত মূল্য কমবে, তরুণদের মধ্যে ব্যবহার বাড়বে


রহমত ডেস্ক     09 June, 2022     04:58 PM    


প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকপণ্যের ব্যবহার বাড়বে, সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকবিরোধীদের কোন দাবি আমলে নেয়া হয়নি এবং এটি একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প প্রধান মো: হাসান শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায়  সংগঠনগুলো এ প্রতিক্রিয়া জানান।

প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য মাত্র ১ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরে সিগারেটের দাম বাড়বে মাত্র ২.৫৬ শতাংশ, যা ১০ শতাংশ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং তরুণ ও নিম্ন আয়ের জনগণের মধ্যে কমদামি সিগারেটের ব্যবহার আশঙ্কাজনকহারে বাড়বে। উল্লেখ্য, বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই নিম্ন স্তরের দখলে যার প্রধান ভোক্তা মূলত দরিদ্র ও তরুণ জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে, সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে কেবল খুচরামূল্য ১ টাকা বাড়ানোর কারণে বর্ধিত মূল্যের একটা অংশ কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। তবে, তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় বহগুণ বাড়বে এবং কমদামি সিগারেটের ব্যবহার কমবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (৩.১৭ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১০২ টাকা থেকে ১১১ টাকা (৮.৮২ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৩৫ টাকা থেকে ১৪২ (৫.১৮ শতাংশ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (১০ শতাংশ) তুলনায় দামবৃদ্ধি কম হওয়ায় সব ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে অর্থাৎ আরো সস্তা হয়ে পড়বে এবং জনগণ সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত হবে। একইসাথে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সম্পূরক শুল্ক সুনির্দিষ্ট আকারে আরোপ না করায় কর আহরণে জটিলতা বাড়বে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকিসহ নানাভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিড়ি, জর্দা ও গুলের দাম এবং করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বিড়ির প্রধান ভোক্তা নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। এছাড়া তামাক ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং নারী। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এসব পণ্য ব্যাপকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে যাবে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীরা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যাবে। প্রতিবছর বাজেটের আগে বিড়ি কোম্পানির মালিকরা তাদের শ্রমিকদের দিয়ে বিড়ির কর বৃদ্ধি ঠেকানোর আন্দোলন করে থাকে এবং বাজেটে তারই প্রতিফলন দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনস্বাস্থ্য, সরকার বঞ্চিত হয় বর্ধিত রাজস্ব থেকে।

বর্তমানে প্রায় সকল নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়লেও প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম নামমাত্র বাড়ানো অথবা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কোম্পানির করপোরেট করহার (৪৫ শতাংশ) এবং আয়ের উপর বিদ্যমান সারচার্জ (২.৫ শতাংশ) বাড়ানো হয়নি। ফলে তামাক কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ অব্যাহত থাকবে। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “কমদামি সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং তামাকবিরোধীদের দীর্ঘদিনের দাবি সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রচলনের কোনো নির্দেশনা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন (গ্যাটস্ ২০১৭) এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন (টোব্যাকো অ্যাটলাস, ২০১৯)। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট খাত থেকে সরকারের ৯,২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এছাড়াও বিড়ি, জর্দা এবং গুলের মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে এবং এসব খাতে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।