মুসলিম বিশ্ব ডেস্ক 09 December, 2022 07:39 PM
আগামীকাল (১০ ডিসেম্বর) শনিবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে সরকারের কাছে ১৩ দাবি তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসক। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। এবারের বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে— ‘মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার সবার জন্য।’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-২০২২ এর প্রাক্কালে জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য এবং সবার জন্য বিচার নিশ্চিতের নিশ্চয়তায় সরকারের কাছে আসক এসব দাবি জানায়।
দাবিগেুলো হচ্ছে—
১. রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে যেকোনও ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন- বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার-বহির্ভূত আচরণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে, তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সম্পৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে।
২. এ পর্যন্ত সংঘটিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দেশের যেকোনও নাগরিককে আটক বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
৩. গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এ আইনে মামলা গ্রহণ না করার নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
৪. নাগরিকের সমবেত হওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার যথাযথভাবে চর্চা করার পরিবেশ তৈরি এবং জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। নারীর অধিকার সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। শিক্ষা কারিক্যুলামে সমমর্যাদা, সমানাধিকার, বৈষম্যহীনতা, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬. নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এবং প্রতিকার বিধানে ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। ২০০৭ সালে আইন কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত ক্রাইম ভিকটিম কম্পেনসেশন অ্যাক্ট আইনে পরিণত করতে হবে।
৭. সাক্ষ্য আইন (সংশোধন) বিল, ২০২২ দ্রুততার সঙ্গে গেজেট আকারে প্রকাশ এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের ১৮ দফা নির্দেশনা সুষ্পষ্টভাবে মেনে চলা এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ নির্দেশনা ব্যাপকভাবে প্রচার করা এবং দায়িত্ববাহকদের যথাযথভাবে জানানো ও সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। আইন ও বিচারিক কাঠামো নারী বান্ধব করতে হবে।
৮. ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে কোনও সহিংসতার ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. মানবাধিকারকর্মী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী— জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ দ্রুততার সঙ্গে সংশোধন করতে হবে। কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
১০. পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১১. কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১২. দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার ভোগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
১৩. অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও সহযোগিতায় বিদেশি দূতাবাসগুলোতে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর চালুসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বিস্তৃত করতে হবে।