রহমত নিউজ ডেস্ক 18 September, 2022 11:56 AM
শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমাদ শফী রাহিমাহুল্লাহু। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ও শতবর্ষী আলেম। ১০৪ বছর বয়সে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে ২০২০ সালের এইদিনে (১৮ সেপ্টেম্বর) তিনি ইন্তেকাল করেন।
শতবর্ষী আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফী দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ ও চট্টগ্রামে একাধিকবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ২০২০ সনের এইদিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে তাকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইসলামি অঙ্গনের এ অবিসংবাদিত নেতা ও বহু আলেম-ওলামার উস্তায আল্লামা শফী দীর্ঘদিন যাবৎ ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। এক নজরে তার দীর্ঘ দিনের কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা হলো-
ব্যক্তিগত পরিচয়
আহমদ শফী।
বাবা : বরকম আলী।
মা : মেহেরুন্নেছা বেগম।
ছেলে-মেয়ে : ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে।
বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। পরিচালক, পাখিয়ারটিলা কাওমি মাদ্রাসা। ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী। হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক। সম্প্রতি এক ছাত্র বিক্ষোভের মুখে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
জন্ম
আল্লামা শাহ আহমদ শফী ১৯১৬ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পড়াশোনা
রাঙ্গুনিয়ার সফরভাটা মাদ্রাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। তারপর পটিয়ার আল-জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) পড়াশোনা করেন।
১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর ঐতিহাসিক দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। সেখানে চার বছর পড়াশোনা করেন।
কর্মময় জীবন
আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৮৬ সালে মাদ্রাসাটির মজলিশে শুরা তাকে মহাপরিচালক বা মুহতামিম নিযুক্ত করে। তারপর থেকে তিনি টানা ৩৪ বছর ধরে মহাপরিচালকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মাদ্রাসাটির শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পান। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তিনি অসুস্থতার কারণে মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নিলেও তাকে আমৃত্যু সদরুল মুহতামিম হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে জানা যায়।
লেখালেখি
দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আল্লামা আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বই রচনা করেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে-
বাংলায়-
- হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব,
- ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা,
- ইসলাম ও রাজনীতি,
- সত্যের দিকে করুন আহ্বান,
- সুন্নাত ও বিদ-আতের সঠিক পরিচয়।
উর্দুতে
- ফয়জুল জারি (বুখারির ব্যাখ্যা),
- আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক ওয়াল বাতিল, ইসলাম ও ছিয়াছাত এবং
- ইজহারে হাকিকাত উল্লেখযোগ্য।
দায়িত্ব পালন
জীবদ্দশায় তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদে ছিলেন। এছাড়া কওমি মাদ্রাসাগুলোর সমন্বিত বোর্ড ‘আল-হাইয়াতুল উলয়া’র তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নেতৃত্বেই ২০১৭ সালে সরকার কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেয়।
২০১০ সালে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মৃত্যু
২০২০ সনের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ১০৪ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ইন্তিকালের আগের কয়েক বছরে তাকে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। মাঝে ভারতে গিয়েও চিকিৎসা নেন তিনি। ২০২০ সনের ১১ এপ্রিল হজম এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়ায় নগরীর বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল আল্লামা আহমদ শফীকে।
পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তিন দিন পর তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সুস্থ হয়ে ২৬ এপ্রিল তিনি চট্টগ্রামে ফেরেন। আবার অসুস্থ হলে সেই হাসপাতালে আনার পরই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আল্লামা শফী।
ইলমে দ্বীনের খাদেম ও ষতবর্ষী আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন। ইসলামের জন্য তার খেদমতকে কবুল করুন। আমিন।