মূল পাতা আন্তর্জাতিক ইউরোপ অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারে মার্কিন নীতি ব্যর্থ : সিএফআর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 16 July, 2022 10:12 AM
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে কর্মরত প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাংক ‘দ্য কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’ তথা সিএফআর অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারের মার্কিন নীতিগুলো ব্যর্থ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন মুক্তভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকে উৎসাহিত করার কথা বলছে, তেমনি সময়ে এমন অবস্থার কথা গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে আসায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। এই পরিস্থিতির অবসানে বাইডেন সরকারকে সাইবার, ডিজিটাল বাণিজ্য এবং স্বাধীনভাবে অনলাইন ব্যবহারের বিষয়ের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছে সিএফআর। স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কর্মরত এই অলাভজনক সংস্থাটি বাইডেন প্রশাসনকে সাইবারস্পেশকে নিরাপদ করার জন্যে এ ইস্যুতে নতুন বৈদেশিক নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার ‘বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট যুগের অবসান’ শীর্ষক ‘বশ্বিব্যাপী ইন্টারনটে যুগ শষে’ শীর্ষক বিশেষ এক গবেষণা জরিপের ভিত্তিতে প্রকাশিত এ রিপোর্টে মার্কিন প্রশাসনকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে তার মিত্রদের জন্য নতুন কর্মকৌশল অবলম্বন করতে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্ত-স্বাধীন ইন্টারনেট ব্যবহারকে উৎসাহিত করার মার্কিন নীতি ব্যর্থ হয়েছে। এখনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে না।’ চীন এবং রাশিয়া ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে। বেইজিং এবং মস্কো ইন্টারনেটে আমেরিকার প্রভাব কমাতে চেষ্টা করছে। তারা অনলাইনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ চাচ্ছে। থিঙ্কট্যাংকটি মনে করছে, গোপনীয়তা ও প্রতিযোগিতার মত উদ্বেগজনক ইস্যুতে পাশ্চাত্যের সাথে মতবিরোধ চলতে থাকায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে ইন্টারনেট-সার্ভিসকে মুক্ত করার চেষ্টা সফল করা যাচ্ছে না। ইন্টারনেট যুগের প্রথম ৩০ বছরে বিনামূল্যে বিশ্বব্যাপী উম্মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নিরলসভাবে কাজ করছিল। সকলের উপযোগী একটি নীতিমালাও তৈরী করা হয়।
এমন অভিমত পোষণ করে সিএফআর বলেছে, ইন্টারনেট ব্যবস্থা এখনও চালু রয়েছে। তবে এই নতুন বাস্তবতার মুখোমুখী হয়েছে মার্কিন সাইবার এবং বিদেশী নীতিগুলো। সংস্থাটি মনে করছে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে মার্কিন নীতি ঢেলে সাজাতে হবে। একইসাথে যতটা দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রকে সরব হতে হবে। বর্তমানের হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেছে সিএফআর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইন্টারনেট নীতির প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে বাইডেন প্রশাসন। এ বছরের শুরুতে ইন্টারনেটের ভবিষ্যতের জন্যে তার ঘোষণায় দিতে ৬০টিরও অধিক দেশের একটি তালিকা করেছে হোয়াইট হাউজ। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ইন্টারনেট নীতির জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি এবং নীতির প্রচার করা যা মানবাধিকার, অনলাইন স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাশ্রয়ী মূল্যের সংযোগকে এগিয়ে নেয়।
সিএফআর বলেছে, এটি বাইডেন প্রশাসনের উচ্চাশা এবং তাকে সঠিক বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র রাশিয়া এবং চীনা মডেলের বিরোধীতা যথেষ্ঠ নয়। এ অবস্থায় সমমনা দেশগুলোর মধ্যে একটি ডিজিটাল বাণিজ্য চুক্তি তৈরী করা, ইউরোপিয় বিধি-বিধান মেনে ডিজিটাল গোপনীয়তা বিধি গ্রহণ, একটি আন্তর্জাতিক সাইবার ক্রাইম বিরোধী সেন্টার তৈরী এবং ডিজিটাল প্রতিযোগিতাকে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করেছে সিএফআর। স্বাধীন ও উম্মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে শেকড়-ছিন্ন হলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ এবং যুগোপযোগী নীতি গ্রহণে ঐক্যমতে উপনীত হতে পারছে না। গোপনীয়তা, অবিশ্বাস, শিল্পের প্রসার, ডেটা প্রবিধানের বৈধ করণে তারা বিভক্ত। চীনা এবং রাশিয়ান সাইবার আক্রমণের হুমকিগুলোর একটি অংশের মূল্যায়ন এবং অনলাইনে মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি-এই অমিমাংসিত সমস্যাগুলি দূর করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।