| |
               

মূল পাতা জাতীয় আমাদের উন্নয়ন শহর ভিত্তিক নয় : প্রধানমন্ত্রী


আমাদের উন্নয়ন শহর ভিত্তিক নয় : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     24 February, 2022     07:15 PM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি একেবারে শিশু-কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরা এই এসব প্রকাশনাগুলো পড়লে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেমন জানতে পারবে, তেমনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সম্পর্কে ইতিহাসকে জানতে পারবে। আমাদের উন্নয়ন শহর ভিত্তিক নয়, একেবারে তৃণমূল থেকেই আমরা উন্নয়ন করে আসছি। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের আয়োজনের ফলে মানুষ যেমন ইতিহাসকে জানতে পারবে, সত্যকে জানতে পারবে, আর এর ভেতর থেকে নিজেরা নিজেদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে। দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি যে একটা দায়িত্ব আছে সেটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে যতই জানতে পারবে ততই তারা তা উপলদ্ধি করতে পারবে। কেননা, একটা মানুষ তাঁর জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন, বাংলাদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের জন্য। আজকে বাংলাদেশের মানুষের যে অবস্থা তা ১৩/১৪ বছর আগেও এমন ছিলনা, এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমরা সে পরিবর্তন আনতে পেরেছি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইসস্টিটিউট মিলনায়তনে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের প্রকাশনা উৎসব ও  ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের চুড়ান্ত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে  বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর লেখা ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ১১টি বইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’ বইটির সম্পাদনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ী ১শ’ জনের মাঝে নির্বাচিত ১০ জনকে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

মুজিববর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বিত উদ্যেগে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন, ভৌত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং এ- টেকনোলজি, বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, শিক্ষা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা, চারু-কারু, কৃষি বিজ্ঞান এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিক্ষেত্রের প্রত্যেক অধিক্ষেত্র হতে একজন করে মেধাবী শিক্ষার্থীকে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তাদের প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে এককালীন তিন লক্ষ টাকার চেক, সনদ এবং ১টি সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে।অন্যদিকে মুজিববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে জাতির পিতার জীবন ও কর্ম সর্ম্পকে তরুণ প্রজন্মকে জানানোর উদ্দেশে ১শ’ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর হতে ২০২১ সালের ১০ই মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে আয়োজিত এই কুইজ প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করেন ১৫ লাখ ৭৬ হাজার প্রতিযোগী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তি পুরস্কৃত হয়েছেন। আর চুড়ান্ত বিজয়ী ১০ জনের হাতে ল্যাপটপ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা সার্টিফিকেট তুলে দেন স্পিকার। বাকীদের পুরস্কার যার যার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়ার কখাও অনুষ্ঠানে জানান আয়োজক কমিটি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ও অনুবাদ উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম। সাহিত্য অনুষ্ঠান উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পূর্বে ধারণকৃত বক্তব্য অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিববর্ষের থিম সংগ ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এত গান, কবিতা এত রচনা হয়েছে যে,আমি জানিনা পৃথিবীতে এমন আর কোন নেতা আছে কিনা যাঁদের নিয়ে এত রচনা হয়েছে। এই রচনাগুলো লোক সাহিত্য থেকে শুরু করে বিজ্ঞান বিষয়ক সর্বক্ষেত্রেই বিস্তৃত। বঙ্গবন্ধুর অবদানকে মানুষ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে, কেবল গ্রহণ করলেই হবেনা। আমি চাই নতুন প্রজন্ম সেই আদর্শে আদর্শবান হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকে নতুন প্রজন্ম ২০৪১ সালের সৈনিক হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধাপে ধাপে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হবে। আর সেটা করা খুব কঠিন কাজ নয়, ইনশাল্লাহ আমরা তা করতে পারবো। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। সেই সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা। অনুষ্ঠান আয়োজক-প্রকাশকদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে মানুষ সঠিক ইতিহাস জানার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটা অবশ্যই সফল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে অব্যাহত রাখার আভাস দেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘শিক্ষায় অর্থ ব্যয় হচ্ছে বিনিয়োগ’। দেশের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া শিখিয়ে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারা দেশ গড়ার কাজে নিবেদিত হয় এবং দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে।

তিনি আরো বলেন, আজকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে এবং আমি অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি ২০০৮ এ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর ২০২২ সালের এই সময়ে আমরা বাংলাদেশে একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। একদিকে যেমন দারিদ্রের হার আমরা কমাতে পেরেছি তেমনি স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি। পাশাপাশি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা দিতে পেরেছি এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর যেমন গুরুত্ব দিয়েছিলাম সেখানেও আমরা যথেষ্ট সফল হয়েছি। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এবং জানার মাধ্যমে সমগ্র বিশ^ এখন মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বাংলাদেশ এখন আর অন্ধকারে পড়ে থাকছে না। বরং বাংলাদেশের মেধাবী ছেলে-মেয়েরাও বিশে^র কাছে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে পারছে, তাদের জ্ঞান আরো উদ্ভাসিত হচ্ছে। প্রযুক্তির সেটাই সবথেকে বড় অবদান। আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি সেটা ধরে রেখে দেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাজীবন জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন, শহীদরা রক্ত দিয়ে গেছেন। এই আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যেতে পারেনা। তাঁদের এই মহান ত্যাগের একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। শিক্ষায় জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ উন্নত হবে এবং সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।