রহমতটোয়েন্টিফোর ডেস্ক 01 November, 2021 12:24 AM
বাংলাদেশে পয়লা নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাটকা অর্থাৎ বাচ্চা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ প্রথম অপরাধ বিবেচনায় জাটকার মাপ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সরকার বলছে, বাচ্চা ইলিশকে বড় হবার সুযোগ দেওয়ার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়াহয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে জাটকা বা বাচ্চা ইলিশের মাপ যদি ১০ ইঞ্চির নিচে হয়, তাহলে তিনি জাটকা ধরার জন্য দণ্ডিত হবেন জেলে। বিক্রয়-বিপণন ও সংরক্ষণের জন্য সাজা পাবেন আড়তদার ও ব্যবসায়ী।
এর আগে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার।
তার আগে পয়লা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দু’মাস ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
বাংলাদেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী জাটকা নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ, কিন্তু সময় বেধে দিয়ে জাটকার আকৃতিতে পরিবর্তন এনে নিষেধাজ্ঞা এবারই প্রথম দেওয়া হলো।
জাটকা হয় কোন ইলিশ?
বাংলাদেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী, এতদিন জাটকার আকার ছিল নয় ইঞ্চি। কিন্তু, সম্প্রতি ওই আকার এক ইঞ্চি বাড়ানো হয়েছে।
এখন জাটকা বলতে বোঝানো হবে ১০ ইঞ্চি মাপের বাচ্চা ইলিশ।
এ ইলিশকে পূর্ণ বয়স্ক ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়াহয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার বলেছেন, মুখ থেকে লেজ পর্যন্ত ইলিশের এ মাপ হিসাব করা হয়।
সাধারণত ১০ ইঞ্চি আকারের একটি ইলিশের বয়স ধারণা করা হয় ৮-৯ মাস।
কিন্তু, পূর্ণবয়স্ক ইলিশে পরিণত না হলে সে মাছ প্রজনন প্রক্রিয়া শুরু করবে না, অর্থাৎ ডিম ছাড়া ও বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইলিশের একটি নির্দিষ্ট বয়স লাগে।
আনিসুর রহমান তালুকদার বলেছেন, একটি ইলিশের পূর্ণবয়স্ক হবার জন্য এক বছরের বেশি সময় লাগে।
তিনি বলেছেন, ‘জন্মের পর থেকে এক বছর বেঁচে থাকতে পারলে তা কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি বা এক ফুট আকৃতির চেয়ে বড় ইলিশে পরিণত হবে। তখন এরা প্রজনন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।’
ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ
গত কয়েক বছর ধরে মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারি বিধি-নিষেধের ফলে ইলিশের উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে বলা হয়।
বাংলাদেশে ২০০৩-২০০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করা হয়, তখন থেকেই আস্তে আস্তে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
তালুকদার বলেছেন, ‘ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের ফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য এখন মা ইলিশের পাশাপাশি জাটকা সংরক্ষণের উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ১০ ইঞ্চির ছোট সকল জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, বিনিময় ও মজুত আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এ সময় নদীতে ব্যবহারের জন্য জেলেদের জালের ব্যাস বা ফাঁসের গিঁটের দূরত্ব সাড়ে পাঁচ সেন্টিমিটারের চাইতে কম হলে জেল-জরিমানার বিধান আছে আইনে।
এ সময় মৎস্য অধিদপ্তর স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে জেলেদের মধ্যে জাটকা না ধরার উপকারিতা সম্পর্কে গণসচেতনতা চালানো হবে।
একইসাথে স্থানীয় প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ মিলে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে।
এ সময়ে নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হবে।
বাংলাদেশে সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন, ওই উৎপাদন এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো।
সরকারের লক্ষ্য আগামী দু’বছরের মধ্যে উৎপাদন সাত লক্ষ টনে উন্নীত করা। বাংলাদেশ এখন ইলিশ উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।
সূত্র : বিবিসি