রহমত নিউজ 07 October, 2025 01:48 PM
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ প্রশাসনে ওসি পদে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার পদায়ন ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই অনশন কর্মসূচি দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অনশন চলছে।
ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনে জুলাই যুদ্ধারা বলেন, বর্তমানে ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. হুমায়ুন কবীর, যিনি একসময় এমসি কলেজের নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধারা বলেন, ব্যাপারটা খুব হাস্যকর না? তার মত লোক কে ওসি বানিয়েছেন পুলিশ সুপার ও ডিআইজি, ব্যাপারটা খুবেই হাস্যকর? তারা আরও বলেন, কয়েক মাস আগে প্রায় ৬০০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছিলেন। এই তিন মাসে অধিকাংশ জামিনে মুক্তি পেয়ে হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চলে যায়। থানা পুলিশ জানলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করেননি। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত জেলা পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে একজন বদলি হলেও আরেকজন জেলা পুলিশের ডিএসবি'তে কর্মরত রয়েছে। এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিনটি অভিযোগ জমা হয়েছে। কার কাছ থেকে কিভাবে কত টাকা নেওয়া হয়েছে এবং কার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন অভিযোগে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে একটি অভিযোগ জমা হয়েছে।
একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে গোপন নথিপত্র আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে চলে গেছে। এই ঘটনায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে জবাব চেয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ৩ সদস্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, একজন সরকারী পুলিশ সুপার ও একজন পুলিশ পরিদর্শক (ডিএসবি) কে দায়িত্ব দেন পুলিশ সুপার। বিষয়টি তদন্তধীন থাকায় আর কিছু বলতে চাননি তিনি। একটি গোপন সূত্র জানান, পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে গোপন নথিপত্র আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে চলে যাওয়ার ঘটনায় কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই ঘটনায় জেলা পুলিশের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিভাবে ফাঁস হয়ে গেল গোপন নথিপত্র। কারা জড়িত?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভালুকা থানার ওসি মোঃ হুমায়ুন কবীর ২০০২ সালে সিলেটের লালাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ২০০৪-২০০৫ সালে দক্ষিণ সুরমা থানা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত আজাদ গ্রুপের অনুসারী এবং তার বাবা ছিলেন সাবেক পুলিশ পরিদর্শক ও ইউপি আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ছিলেন।
এসব তথ্য পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা’র পরিচিতি যাচাই রিপোর্টে উল্লেখ থাকলেও, সিলেটের সিটি এসবি’র পুলিশ পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার সঙ্গে জড়িত নন এই দ্বৈত তথ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি হুমায়ুন কবীর খোকন বলেন, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং তার নামে কেউ হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছে। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আখতার উল আলম জানান, যাচাই রিপোর্টের ভিত্তিতে হুমায়ুন কবীরকে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তবে নতুন কোনো তথ্য প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি পদায়ন কে ঘিরে ময়মনসিংহে প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আইজিপি বরাবরে দুটি অভিযোগ জমা হলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি'র কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। অভিযোগ দুই মাস হলেও ডিআইজি কার্যালয় থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায় বলে জানাগেছে।
ইতিপূর্বে একাধিক থানার ওসি যারা আওয়ামী নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযানে সক্রিয় ছিলেন, তাদের একযোগে বদলি করা হয় বিভিন্ন রেঞ্জে। বদলির পর সেইসব থানাগুলো থেকে আওয়ামী নেতাদের গ্রেপ্তার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। বদলির পেছনেও রাজনৈতিক ভাবে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, অতীতের বিতর্কিত আরেক ওসি মিজানুর রহমান, যিনি নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় জামাত-বিএনপির নেতাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন, তাকেও ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়।
গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের পর তাকে আট ঘণ্টার মাথায় প্রশাসনিক কারনে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করেন পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম।
গোপন তথ্য অনুযায়ী, এক সাংবাদিক পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহে কোনো বড় সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, যাদের অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে।
গ্রেপ্তার, মামলা, নিপীড়ন, নির্যাতন, এমনকি অর্থ আদায়ের অভিযোগের বিপরীতে এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, এভাবে বিতর্কিত এবং রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পুলিশ প্রশাসনে বসিয়ে রাখলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে এবং জনগণের আস্থা আরও কমে যাবে। একইসঙ্গে, বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের ন্যায়ের প্রতিশ্রুতিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।