রহমত নিউজ 05 March, 2025 01:06 PM
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে নিজের তৈরি ‘উড়োজাহাজ’ আকাশে উড়িয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছেন বৈদ্যুতিক জুলহাস মোল্লা (২৮)।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনার চরে উড়োজাহাজটি আকাশে উড়ান তিনি। এ সময় মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ যমুনার পাড়ে উপস্থিত ছিলেন।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায় বাড়ি হলেও নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা (বিলপাড়া) গ্রামে বাড়ি করে পরিবারসহ বসবাস করছেন জুলহাস। বাবা কৃষক জলিল মোল্লা। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। জিয়নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। অর্থাভাবে আর পড়া হয়নি। বর্তমানে ঢাকায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন জুলহাস।
জানা গেছে, শৈশব থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল জুলহাসের। পড়াশোনার ইতি টানলেও উদ্ভাবনী চিন্তা তাকে তাড়িয়ে বেড়াত। ২০২১ সালে যখন প্রথমবারের মতো আরসি (রিমোট কন্ট্রোল) প্লেন দেখেন, তখন ঠিক করেন নিজে একটা প্লেন বানাবেন। এরপর শুরু হয় নিরলস গবেষণা। ইউটিউব, বইপত্র ঘেঁটে ধাপে ধাপে শিখতে থাকেন প্লেন তৈরির খুঁটিনাটি। যন্ত্রাংশ জোগাড় করা থেকে শুরু করে নকশা তৈরি, কাঠামো সাজানো, সবকিছু করেছেন নিজেই। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টার পর অবশেষে সফলতা এল। নিজের হাতে তৈরি সেই প্লেনে চড়ে আকাশে উড়েন তিনি।
জুলহাস মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, এসএসসির পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। পেশায় ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি হিসেবে ঢাকায় কাজ করি। চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পর আল্ট্রালাইট বিমান তৈরির কথা মাথায় আসে। কিন্তু তাতে তেমন সফলতা আসেনি। পরে গত এক বছর চেষ্টা করে এই বিমানটি তৈরি করতে সক্ষম হই।
তিনি আরও বলেন, মূলত টাকার জোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, আর অ্যালুমানিকনিয়াম, এসএস দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। ওজন হয়েছে ১০০ কেজি। গতি পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে একটি ডিজিটাল মিটার, অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে পাখা তৈরি করা হয়েছে। ইঞ্জিন চলবে অকটেন অথবা পেট্রল দিয়ে। ঘণ্টায় গতি হবে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার।
উদ্ভাবক জুলহাস আরও বলেন, প্রথম দিকে পরিবার ও এলাকাবাসী আমাকে পাগল ভেবে হেলা করেছে। তবে এখন সবাই উৎসাহ আর বাহবা দিচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে।
জুলহাস জানান, ফায়ার অ্যালার্মের চাকরির পাশাপাশি চার বছর ধরে তিনি উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়ানোর চেষ্টা করছেন। শখের বসে তিনি প্রায় তিন বছর আগে একটি খেলনা বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়েছিলেন। তিনি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজেই ড্রাইভ করে আকাশে উড়িয়েছেন উড়োজাহাজটি। এই উড়োজাহাজটির যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করেছেন জুলহাস। তবে গত চার বছরে এই কাজের পেছনে ৮-১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরইমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে একটি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন।
জুলহাস মোল্লার বাবা জলিল মোল্লা বলেন, জুলহাস ছোটবেলা থেকে প্লাস্টিকের জিনিস কাটাকাটি করে কিছু বানাতে চাইতো। জিজ্ঞেস করলে বলত, একদিন দেখবে আমি কী বানাইছি। সারা দেশের মানুষ দেখবে। চার বছর ধরে চেষ্টা করছে প্লেন উড়ানোর। প্রতিবছরই যমুনার চরে উড়ানোর চেষ্টা করে। এবার সফল হয়েছে। গতকাল ৫০ ফুট ওপরে উড়ছে উড়োজাহাজটি।
উদ্ভাবনী এই কাজের প্রশংসা করে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মো. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, এমন উদ্ভাবনী কার্যক্রমে আমি অভিভূত। প্লেনটি অবতরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মুঠোফোন মাধ্যমে জানতে পারি, মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার একজন ছেলের তৈরি এই প্লেন। তার সঙ্গে যোগাযোগের পর আজ তার এলাকায় এসে তাকে প্রণোদনা এবং সরকারি সহায়তা দেয়া যায় কি না, সে বিষয়ে চেষ্টা এবং এই প্রযুক্তি বিকাশে প্রশাসন তার পাশে থাকবে। এরইমধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করে তাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।