বিএসএফের বুলেটে ১৫ বছরে হত্যা ছয় শতাধিক, বিচার হলো কয়টি?

সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যদের গুলিতে হত্যার ঘটনা দিন দিন আরো উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। চলতি মাসে আট দিনের ব্যবধানে দুজনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। গত মাসে তিনজন নিহত ও তিনজন আহত হয়।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, গত ১৫ বছরে সীমান্তে ছয় শতাধিক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির গুলিতে কোনো ভারতীয়কে নিহত হতে দেখা যায় না ।

সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তাগিদ দেয়া হচ্ছে ভারতকে। বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে সীমান্ত সম্মেলন বা পতাকা বৈঠকে হয়। সেখানে প্রতিবারই সীমান্তে আর গুলি চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর রক্ষা হয় না।

এখন পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ডের একটিরও বিচার হয়নি। এমনকি বিএসএফ বা ভারত সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কখনো কোনো উদ্বেগও প্রকাশ করেনি।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জবাবদিহির বাইরে থাকার কারণেই মূলত সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আইন কোনো বাহিনীকে বিশ্বের কোথাও নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের গুলি বা নির্যাতন করার অনুমতি দেয় না। তাই এই মুহূর্তে সুষ্ঠু সমাধান জরুরি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অধিকার নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০৯ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের হাতে অন্তত ৫৮২ বাংলাদেশি নিহত এবং ৭৬১ জন আহত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের স্থানটি নির্ধারণ হলেই বেশ কিছু বিষয় সামনে চলে আসবে। নো ম্যানস ল্যান্ড অতিক্রম করার আগেই অপর পাশ থেকে গুলি আসে কি না এটা চিহ্নিত করা জরুরি। সীমান্তে প্রবেশ করলেও সরাসরি নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করার বিধান নেই। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ভারতকে লিখিতভাবে অভিযোগ করে অফিশিয়ালি জবাব চাইতে পারে বাংলাদেশ। যদি এতে সমাধান না হয়, তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সীমান্ত এলাকা খুবই অস্থিতিশীল এবং অরক্ষিত হওয়ায় সেখানে ভারত একটা প্রভাব বিস্তার করতে হিরোইজম প্রকাশ করে থাকে, যা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। দুই দেশের বৈঠকে হোক বা আন্তর্জাতিক বিচারের মাধ্যমে হোক, এর  সুরাহা না হলে দিনদিন আরও হত্যাকাণ্ড বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।