রহমত নিউজ 04 September, 2024 06:49 PM
সিস্টেম লসের নামে ১ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুরি হয়ে যাচ্ছে। সিস্টেম লস (বর্তমান লস ৯.৮২) যদি অর্ধেক কমানো যায়, তাহলে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব। আমদানি সাশ্রয় করার সুযোগ রয়েছে।
বুধবার (৪ আগস্ট) ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) কনফারেন্স সেন্টারে এক সেমিনারে ড. ইজাজ হোসেন এমন মন্তব্য করেন। আইবিএফবি ও এনার্জি এন্ড পাওয়ারের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাত সংস্কারের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন। আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার পত্রিকার এডিটর মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এলএনজি আমদানি সমর্থন করি, তবে এটা সীমিত রাখতে হবে। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই। আমরা যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ দিতে চাই তাহলে এ খাতে আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই জটিল। আমাদের দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা যদি বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট ধরে রাখতে চাই তাহলে বছরে কমপক্ষে ১০ অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে। আমরা এক সময় ২৮০০ মিলিয়ন উৎপাদন করতাম, আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রমের অভাবে কমে গেছে। পৃথিবীর কোন দেশে উৎপাদন কমে যাওয়ার নজীর দেখাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে গ্যাস ২০ শতাংশ আমদানি করে ২০ টাকার মতো খরচ দাঁড়িয়েছে। ২০৩০ সালে আমদানি ৫০ শতাংশ হলে মূল্য (ঘনমিটার) দাঁড়াবে ৩৮ টাকা। আর যদি আমদানি ৮০ শতাংশ করতে হয় তাহলে ৫৫ টাকার মতো দাম পড়বে। অতএব অনুসন্ধানের বিকল্প নেই। ২০৩০ সালে কয়লা আমদানি করতে হবে ১৫ মিলিয়ন টন। দেশীয় কয়লার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসা দরকার। শিল্পে গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, ক্যাপাসিটি প্রেমেন্ট নিয়ে কথা হয়, এখানে অব্যহৃত ক্যাপাসিটির প্রেমেন্ট কতো, সেটা দেখা উচিত, সেখানে যদি কারচুপি হয়ে থাকে তার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গত সরকারের কতগুলো কাজ করেছে, বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের টিকার দিয়ে, টোকাই রিজার্ভ নিয়ে মাঠে বক্তৃতা দিচ্ছে। তেমনি, বিদ্যুৎ ২৩ হাজার মেগাওয়াট করতে হবে, ক্যাপটিভ দিয়ে দেখানো হলো। সরকার সারাক্ষণ হস্তক্ষেপ করেছে, পেট্রোবাংলার কোন সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের গিয়ে পলিটিক্যাল কারনে বদলে গেছে। পেট্রোবাংলা প্রস্তাব ঠিক দিচ্ছে, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বদলে যাচ্ছে। গ্যাস নেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে বসে আছে। চাপ দিয়ে গ্যাস দেওয়ার চুক্তি করা হয়েছে। তথ্য সন্ত্রাস সবক্ষেত্রে হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নত আয়ের পরিকল্পনা ধরে ২০ বছরে ৯ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ ধরে পাওয়ার সেক্টরে প্লান করেছে। আয় ১২ হাজার ডলার ধরে, মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা বলেছি আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে, শেভরনের মতো অন্য ফিল্ডগুলোতে উৎপাদন বাড়ানো সুযোগ রয়েছে। ডাবল ট্যাক্স অনেক জায়গায়, যে কারনে প্রাইস হাই হয়ে যাচ্ছে। বিজনেসকে বাঁচাতে হবে, না হলে ফরেন কারেন্সী টান পড়বে।
আইবিএফবি সহসভাপতি এমএস সিদ্দিকী বলেন, প্রথম থেকে যখন সংকট শুরু হয় আমরা অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থার দিকে গেছি, ভাগভাগির মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রতিযোগিতা না থাকলে স্বচ্ছতা থাকে না, প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায় না। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রির গাড়ি সরকার ছাড়া কেউ কেনে না। আইন করে বিনা টেন্ডারে তাদের থেকে বেশি দামে কেনো কিনতে হবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল বলেন, পরিস্থিতি জটিল ব্যাপার, ভয়াবহ ব্যাপার মনে হচ্ছে। ম্যাক্স পাওয়ারকে কাজ দেওয়া হয়েছে ৩ টাকা বেশি দরে। ৩ টাকা বেশি মানে ঘণ্টায় তার ৩ লাখ টাকা বেশি। দেশের লোকাল কোম্পানি রাতারাতি সিঙ্গাপুরী কেম্পানি হয়ে গেলো, আগে দেশে দিতাম, এখন সিঙ্গাপুরে ডলার পৌঁছে দিচ্ছি।
শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, গ্যাস অভাবে কারখানা ঠিকমতো চলছে না। এগুলো যদি অ্যাড্রেস না করি, শিল্পবন্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কি সেদিকে যাচ্ছি প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের পরিচালক প্রকৌশলী রাজিব হায়দার বলেন, ১.০২ ট্রিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। গ্যাস চুরি হচ্ছে, ক্যাপসিটি চার্জ দিচ্ছি, সব নিতে হচ্ছে আমাদেক (ব্যাবসায়ীদের) নিতে হচ্ছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমার চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদি, আমরা ফাটা বাঁশের মধ্যে পড়ে আছি, রপ্তানিকারকের পাস্থ্রু করার কোন পথ নেই। বায়ারকে বলতে পারছি না আমাদের গ্যাসের দাম বেড়েছে। আজকে কারখানায় গ্যাস চাপ পেয়েছি ২.৫ পিএসআই, আমার ২টি জেনারেটর বন্ধ, ৪০-৫০ শতাংশ যদি অব্যবহৃত থাকে তাহলে মুখ থুবড়ে পড়বে ব্যবসা। গ্যাস দাম কমাতে হবে, এই দাম দিয়ে শিল্প টিকবে না।
মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের দেনার পরিমাণ ৫বিলিয়ন ডলার। গত পনের বছরে বিদ্যুতের দাম ১২৮ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানির দায় মিটিয়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে। ইতোমধ্যে গার্মেন্টে ৬ শতাংশ রপ্তানি কমে গেছে যা আমাদের ঝূঁকির।