| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘দিল্লির আধিপত্যবাদ থেকে আমাদের বাংলা ভাষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে’


‘দিল্লির আধিপত্যবাদ থেকে আমাদের বাংলা ভাষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে’


রহমত নিউজ     27 February, 2024     10:19 PM    


সম্ভাবনার বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ভাষা দিবসের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি ও সাংবাদিকরা বলেছেন, মুক্তিযু্দ্ধের চেতনার কথা বলে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন জনগণের ওপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার ক্ষমতা দখলের নোংরা খেলায় মেতেছেন। যারা প্রকৃত ভাষা সৈনিক ও ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী প্রতিষ্ঠান তমাদ্দুন মজলিসের নাম উচ্চারণ করা হয় না। সালাম রফিকরা জীবন দিয়েছে তাদের মহান আত্মত্যাগ ভূলুণ্ঠিত। ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করতে হবে। বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানানো চক্রান্ত চূড়ান্ত। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দিল্লির আধিপত্যবাদ থেকে আমাদের বাংলা ভাষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে। আধিপত্যবাদের পক্ষের শক্তি তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আজ সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করে ফেলেছে। জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য বিরোধী পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হয়েছে যেন ভবিষ্যত প্রজন্ম অখণ্ড ভারত প্রেমিক হয়ে উঠে।

মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সম্ভাবনার বাংলাদেশের উদ্যোগ আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ড. আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম।

আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রহুল আমিন গাজী, কবি আবদুল হাই শিকদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা সিটি কলেজের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নূর নবী মানিক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে যে সংগ্রাম, তা আমাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। বাংলা ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আজও লেখা হয়নি। পাল আমলে বাংলা ভাষা ও জ্ঞান চর্চা হয়েছে। সেন রাজারা বাংলার মানুষের ওপরে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে এবং বাংলা ভাষা চর্চা ও কথা বলা নিষিদ্ধ করেছিল।

বৌদ্ধ থেকে এবং হিন্দু থেকেও মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ইসলামের সাম্যের বাণী দেখে। বাংলায় ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সূফী আন্দোলন ও আলেম উলামাদের ভূমিকা অনেক।

তিনি আরো বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা আজও চালু হয়নি। আজ শাসক গোষ্ঠীর কারণে বাংলা ভাষা সর্বস্তরে চালু হয়নি। বাংলা ভাষা আজ অবহেলিত। দেশে আজ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমি নিজে একটি শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলাম, কিন্তু আজও সেই কমিশনের একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি।

আজ ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যে শিক্ষা দেয়ার কথা সে শিক্ষা পাচ্ছে না আমাদের সন্তানেরা। আজ শিক্ষার নামে কুশিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার প্রকৃত শিক্ষা যদি আমরা গ্রহণ করতে পারতাম তবে আমরা আরও উন্নত হতাম। শেখ হাসিনা কথায় কথায় মদীনা সনদের কথা বলেন। কাওমি জননী খেতাব প্রাপ্ত হন। কিন্তু তিনি সেই অনুযায়ী দেশ চালান না। জাতি রাষ্ট্র নির্মাণে মুসলিম মূল্যবোধ গঠনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মুসলমানরা যে ভাষায় কথা বলে সেটাই বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশের কালচার। বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে না? যদি না আমরা ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান না হয়। এদেশের তরুণরা যদি এগিয়ে না আসে তবে আমাদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা কঠিন হবে।

কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, একুশে বই মেলায় ভিন্ন মত পোষণ করার জন্য স্টল বরাদ্দ দেয়া হয় না অনেক বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে। ইসকনকে বই মেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়া হলো। আওয়ামী দূষিত চেতনার কারণে আজ বাংলা ভাষা হুমকির মুখে এবং মুসলিম সংস্কৃতি হুমকির মুখে। বৌদ্ধ শাসন সময়ে বাংলা ভাষার চর্চা হয়। বাংলায় সেন আগ্রাসনের সময় বৌদ্ধদের উপরে গণহত্যা চালায়। সেন রাজারা জাতিগত বৈষম্যের বর্ণ প্রথা চালু করে এবং বাংলা ভাষা চর্চা ও কথা বলা নিষিদ্ধ করে। বাংলা ভাষায় কথা বললে জিহ্বা কেটে ফেলা হতো সেন শাসনকালে। রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাংলার বৌদ্ধ ও মুসলমানদের এবং বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেন বখতিয়ার খলজি। বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার বিজিপির ফর্মুলা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। বখতিয়ারের বাংলা জয়ের পর বাংলা ভাষা রাজ দরবারে ভাষার সম্মান লাভ করে। মুসলমানরা যদি বাংলা বিজয় না করতো তবে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেত। দিল্লির আধিপত্যবাদ থেকে আমাদের বাংলা ভাষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত। মানুষের ভোটের অধিকার নাই। সরকারি দল ও পুলিশি শাসনে বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষ জুলুমের শিকার। মানুষের বাক স্বাধীনতা নাই। জুলুম নির্যাতন মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করতে হবে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, একুশের চেতনার মানে হলো মাথা নত না করা। বর্তমান দখলদার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের মৌলিক বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। ভোটের অধিকার হরণ করেছে। এই অবৈধ দখলদার আওয়ামী লীগের হাত থেকে একুশের চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে প্রফেসর নূর নবী মানিক বলেন, ভাষা দিবসের চেতনা জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পথ প্রর্দশকের ভূমিকা রেখেছে। ভাষার ওপর আঘাত বাঙালি জাতিকে অধিকার সচেতন করে তোলে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের জাতীয় ঐক্য তৈরিতে এর রয়েছে যুগান্তকারী প্রভাব। ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা হলো অগণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চেতনা। ৫২'র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আসে বাঙালির জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর আজকের বাংলাদেশ একটি আগ্রাসী শক্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত। আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন দেশের অগ্রাসন চলছে। ফলে আজও সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠেনি।

সভাপতির বক্তব্যে আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আবার নতুন করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ইসলাম ও মুসলমান বলে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে তা পরিহার করতে হবে। স্বাধীনতার ঘোষিত মূল চেতনা হলো সাম্য, মানবতা ও ইনসাফ বা সামাজিক ন্যায় বিচার। যারা স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে আধিপত্যবাদ, গণতন্ত্র হরণকারী কর্তৃত্ববাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি