| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে কী করবে বিএনপি?


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে কী করবে বিএনপি?


রহমত নিউজ ডেস্ক     12 November, 2023     12:08 PM    


আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল দ্রুতই প্রকাশ করা হবে- বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এমন ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিও তাদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি কীভাবে আরো জোরদার করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সাথে এতদিন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো ছাড়াও সরকার বিরোধী অবস্থানে আছে- এমন সব দলকে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যেভাবেই হোক আন্দোলনের ‘এক ছাতার নীচে’ আনার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে বিএনপিসহ এসব দল যার যার অবস্থান থেকে একযোগে একই কর্মসূচি দিয়ে ‘আরো বড় ধরনের’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবে বলে বিএনপির একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সেই ‘বড় ধরনের’ কর্মসূচি বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা দলটির নেতারা কেউ এখনি দিতে রাজী হননি। বিএনপির মুখপাত্র এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আলাদা কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে কি না বা চলমান কর্মসূচির সাথে আরো কিছু যোগ করা হবে কি না – এসব বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা এখনো কিছু জানাননি। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। তাই সরকারের পদত্যাগের জন্য আমাদের এক দফার আন্দোলন চলছে এবং চূড়ান্ত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। রবিবার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত তারা চতুর্থ দফার অবরোধ কর্মসূচি পালনের করছে। ওই দিনই আবার নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। সে কারণেই এখন আলোচনায় আসছে যে নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে বিএনপি এখনকার মতো করে কর্মসূচি পালন করে যাবে, না কি বাড়তি কোন কর্মসূচির দিকেও তারা অগ্রসর হবে। আর অগ্রসর হলেও সেটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়েও নানা মত তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।

তফসিল ঘোষণার পর কী হবে?
বিএনপি নেতাদের সাথে আলাপ করে ধারণা পাওয়া গেছে যে - নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই বিএনপির সাথে এতদিন ধরে আন্দোলনে থাকা এবং এর বাইরেও সরকার বিরোধী যেসব দল আছে -সবাইকে নিয়ে একযোগে ‘প্রতিবাদের ঝড়’ তোলাই হবে তাদের লক্ষ্য। বিএনপি গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বেশ কিছু দলের সাথে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে অনেক দিন ধরে বিএনপির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির কর্মসূচির দিনে একই কর্মসূচি পালন করছে।

আবার চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে- এমন কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। যদিও তারা বিএনপির সঙ্গে মিলে আন্দোলন করবে কি না এমন কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে চরমোনাই পীরের মুফতি রেজাউল করিম ঢাকায় গত সপ্তাহের মহাসমাবেশে সরকারকে দশই নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, সরকার দাবি না মানলে আন্দোলনরত বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। দলটি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে ‘একতরফা নির্বাচনের’ চেষ্টার প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলন না করলেও এসব দল নির্বাচন ইস্যুতে যে অবস্থান নিয়েছে, বিএনপিও সেই একই দাবিতে আন্দোলন করছে। ফলে কর্মসূচিগুলো একই ধরনের করা গেলে সেটি সরকারের ওপর বড় চাপ তৈরি করবে বলে দলটি মনে করে। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, প্রথম এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা মানিনা ও মানবো না। আর এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে তফসিল দেয়া বা না দেয়ার গুরুত্ব নেই। বরং দাবি আদায়ে রাজনৈতিকভাবে যা করা যায় সেটিই আমরা করবো।

তবে শেষ পর্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার বিরোধী অবস্থান নেয়া সব দলকে এক জায়গায় আনা গেলে তাদের কর্মসূচি কী হবে- তা নিয়ে নানা ধরণের বিশ্লেষণ চলছে দলের অভ্যন্তরে। অবরোধ অব্যাহত থাকবে না কি অন্য কোন কর্মসূচি দেয়া হবে, অথবা অবরোধ বহাল রেখেই আরো কর্মসূচি দেয়া হবে – নানা বিকল্প নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। বিএনপির কেউ কেউ ধারণা দিয়েছেন অবরোধ বহাল রেখে ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচির পালন করা যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা আছে। যদিও এসব কিছুই নির্ভর করবে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আন্দোলনরত অন্য দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের ওপর। ফলে সঙ্গত কারণেই এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি বিএনপির নেতারা।

নজর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে?
বিএনপি নেতাদের ধারণা, বিরোধী দলগুলো যখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে, তার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকেও। তাদের এ ধারণার কারণ হলো, নির্বাচন নিয়ে গত এক বছরেরও বেশী সময় ধরে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এমনকি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করছে, এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দেশটি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের দিক থেকেও নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য বিবৃতি আসছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই এ নিয়ে বেশ শক্ত ভাষায় একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে।

কায়সার কামাল বলছেন, গত আটাশে অক্টোবর থেকে কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সারাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ‘নিপীড়ন’ করা হচ্ছে সেটি বিশ্ব সম্প্রদায় দেখছে এবং এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যে অসম্ভব তাদের উপলদ্ধি না করার কারণ নেই।

আর রুহুল কবির রিজভী বলছেন, যত আক্রমণ নিপীড়ন হবে আন্দোলন আরো চাঙ্গা হবে। সরকার যদি একতরফা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যায় এবং নির্বাচন যদি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে সেটি কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না”।

দলের বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েকজন নেতা ধারণা দিয়েছেন যে, দলের একটি বড় অংশ মনে করছে, নির্বাচন কমিশন ‘একতরফাভাবে’ তফসিল ঘোষণা করলে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ আরো জোরালো হবে। সেই সাথে বিএনপিও আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করলে সেটি দেশজুড়ে তাদের কর্মী সমর্থকদের আরো চাঙ্গা করে তুলবে। তবে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশজুড়ে অসংখ্য নেতাকর্মীর আটক হওয়ার কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিও তাদের বিবেচনা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। অর্থাৎ ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচির মতো কিছু ঘোষণা করা হলে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীদের জমায়েত করানোর চ্যালেঞ্জও তৈরি হবে। যদিও কেউ কেউ আবার মনে করছেন ‘সরকার বিরোধী অবস্থানে থাকা সব দল’ একমত হলে ‘যে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিস্থিতি’ তখন তৈরি হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী উনত্রিশে জানুয়ারি। ফলে ওই দিনের আগের নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্রুতই তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেই মনে করে তারা এবং এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরিষ্কার জানিয়েছে যে, নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে এবং এর বাইরে অন্য কিছু তারাও মানবে না। উভয়পক্ষ ইতোমধ্যে বলেছে তাদের অবস্থানের বাইরে গিয়ে কোন ধরনের আলোচনাতেও তারা রাজী নয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংলাপের মাধ্যমে দূরত্ব গুচিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্যও আহবান জানিয়ে আসছে। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো কী পদক্ষেপ নেয় এবং এর বিপরীতে সরকার পক্ষ কী করে- সেদিকেই সবাই তাকিয়ে আছে।