| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার-কারাদণ্ড বিএনপির জন্য কি নতুন চ্যালেঞ্জ?


নেতাদের গ্রেফতার-কারাদণ্ড বিএনপির জন্য কি নতুন চ্যালেঞ্জ?


রহমত নিউজ ডেস্ক     02 November, 2023     09:43 AM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতারের পর বাকী নেতাদের অনেকেই গ্রেফতারের আশংকায় আত্মগোপন করেছেন।বিশেষ করে বিএনপি যখন তাদের ‘সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের’ কর্মসূচি পালন করছে তখন সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার বা আত্মগোপন নতুন করে দলটির জন্য কোন সংকট তৈরি করছে কি-না সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, গ্রেফতার বা মামলায় সাজা দিয়ে অনেক নেতাকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো হলেও তাতে দলের অভ্যন্তরে কোন সংকট তৈরি হবে না। কারণ তারা মনে করেন দলটিতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আছে এবং কেউ গ্রেফতার হলে বিকল্প নেতারাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, এমনটি যে ঘটতে পারে তা আমাদের জানাই ছিলো। এজন্য আগে থেকেই দল প্রস্তুত আছে। সে কারণে নেতাদের গ্রেফতার কিংবা শাস্তিতে দলে সংকট হবে না। বরং আন্দোলনর মাধ্যমেই আটক নেতারা বেরিয়ে আসবেন।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘বিএনপির প্রার্থী হতে পারে এমন নেতাদেরই ‘টার্গেট করে আটক বা আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হচ্ছে’। কিন্তু দলের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা থাকায় এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তাদের জন্য কঠিন কিছু হবে না বলেই মনে করেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন অবশ্য বলেন, বিএনপির সংগঠিত হবার প্রচেষ্টায় নেতাদের গ্রেফতারের একটি প্রভাব থাকবেই। কিন্তু দলটি সেই সংকট মোকাবেলায় কী পদক্ষেপ নেয় সেটিও সামনের দিনগুলোতে দেখার বিষয় হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে করার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এখন ‘চূড়ান্ত আন্দোলনে’ আছে বিএনপি। এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।

নেতাদের আটক, রিমান্ড ও কারাদণ্ড
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাতে আটকের পর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল-উভয়কেই বুধবার (১ নভেম্বর) পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। এর আগে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভাঙ্গার মামলায় আটক হওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রবিবার রাতে আদালতে থেকে কারাগারে নেয়া হয় তাঁর জামিন আবেদন না মঞ্জুর হওয়ার পর। মিস্টার আলমগীরের বিরুদ্ধে এর আগে আরো ১০১টি মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

এর আগে গত ১০ই ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে ঢাকার নয়াপল্টনে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। সেই ঘটনায় ৮ই ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা  আব্বাসকে আটক করেছিলো পুলিশ। পরে তারা ৯ই জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেবার এ দুই নেতার গ্রেফতারের পর দলের অন্য নেতারা হাল ধরেছিলেন বলেই ১০ই ডিসেম্বরের গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ শেষ পর্যন্ত দলটি আয়োজন করতে পেরেছিলো। কিন্তু এবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে আটক করা ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

আবার স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ঢাকা -১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী রবিউল ইসলাম রবিসহ বেশ কিছু নেতাকে মামলায় শাস্তি দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে মি. আমান এখন কারাগারে আছেন, বাকীরা পলাতক। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন দলীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। বুধবারই আটক হয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যারা দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পরিচিত, এমন অনেকেই এখন বাসা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। ফলে দলটির চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে নেতাদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

বুধবার (১ নভেম্বর) অনলাইন ব্রিফিংয়ে বিএনপিরযুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ, ২৯শে অক্টোবরের হরতাল ও মঙ্গল-বুধবার অবরোধকে কেন্দ্র করে মোট ৫৫টি মামলা হয়েছে এবং আটক হয়েছে দলটির ২৫৬৩জন নেতাকর্মী। সব মিলিয়ে গত ২৯শে জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৭৩ মামলায় দলটির ৬৯৭৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া মোট ১৭টি মামলায় নয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১১১ জনের বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।  তবে এ পরিস্থিতি সত্ত্বেও নেতাদের জেল বা আত্মগোপনের কারণে দলের অভ্যন্তরে সংকট বা চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। তাদের দাবি দলের মূল নেতৃত্ব খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান এবং মাঠ পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা জেলে গেলে বা আত্মগোপনে থাকলে- তারেক রহমান পরিস্থিতি অনুযায়ী যখন যাকে যে দায়িত্ব দিবেন তিনিই সে দায়িত্ব পালন করবেন।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি কী করবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন পরিস্থিতি হবে এবং বহু নেতাকে জেল-জুলুম মোকাবেলা করতে হবে এটি তাদের অনুমিতই ছিলো। এটি আমরা জানতাম। কারণ সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সম্ভাব্য সব কিছুই করতে চাইবে, সেটিই স্বাভাবিক। দলের অভ্যন্তরে আমাদের সব পর্যায়ে এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন যাকে যে দায়িত্ব দিবেন তিনিই সেটি পালন করবেন। সংকট আসলে উত্তরণ হবে। দল চলবে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায়। তাই নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হওয়ার কিছু নেই। এগুলো আন্দোলনেরই অংশ।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল  জেলে থাকলেও এখনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করার কোনো আলোচনা দলের মধ্যে নেই। কারণ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীই দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। সহযোগী সংগঠন কিংবা জেলা – থানা পর্যায়েও একই পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে চাইছে দলটি। অর্থাৎ একজন আটক হলে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পরবর্তী যিনি থাকবেন তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য মামলায় সাজা দেয়ার একটি প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিলো। গ্রেফতার হামলা-মামলা নেতাদের জন্য নতুন বিষয় নয়। তবে বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান-সহ নেতৃত্বের একটি ধারাবাহিকতা আছে। শীর্ষ নেতারা তো জেলে বা মামলায় – অথচ সর্বাত্মক অবরোধই তো পালিত হচ্ছে। অর্থাৎ দলের নেতারা বোঝাতে চাইছেন যে নেতাদের গ্রেফতার বা আত্মগোপনে দলের মধ্যে নেতৃত্বের শূন্যতা বা সংকট তৈরির কোন আশঙ্কা তারা করছেন না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন অবশ্য বলেন, বিএনপি মূল নেতা হিসেবে তারেক রহমান বিদেশে থেকে দলটি পরিচালনা করলেও মাঠে অধিকাংশ নেতাই যদি জেলে যান বা আত্মগোপনে থাকেন তাহলে দলটির সংগঠিত হবার প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জে পড়তেই পারে। তবে দেখার বিষয় হবে বিএনপি সেই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয় বা কতখানি দিতে পারে। এটি সত্যি যে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো দলগুলোতে মূল নেতা যাকে দায়িত্ব দিবেন তাকেই দলের বাকীরা মেনে নেয়। এখনকার ব্যাপক গ্রেফতার বা এ ধরনের পরিস্থিতি বিএনপির নেতৃত্বকে নতুন কোন চ্যালেঞ্জে ফেলে কি-না আর ফেললেও তা মোকাবেলায় বিএনপি কী করে সেটিও হবে দেখার বিষয়।


সূত্র : বিবিসি বাংলা