| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি তফসিলের আগে আন্দোলন নিয়ে কোনো পথে বিএনপি?


তফসিলের আগে আন্দোলন নিয়ে কোনো পথে বিএনপি?


রহমত নিউজ ডেস্ক     18 October, 2023     10:11 AM    


বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বলছে, দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পরেই তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে। তার আগে বুধবারের সমাবেশ থেকে সরকারকে একটি আলটিমেটাম দেয়া হতে পারে। এখন থেকে মূলত রাজধানী ঢাকামুখী আন্দোলন হবে।

দুর্গাপূজার আগে বিএনপির সবশেষ কর্মসূচী রয়েছে ১৮ অক্টোবর বুধবার। এদিন সরকারের পদত্যাগসহ একদফা দাবিতে ঢাকায় জনসমাবেশ করবে বিএনপি। তবে এই জনসমাবেশ একেবারেই ঢাকা ও এর আশপাশের শহরগুলোর জন্য বলে জানা যাচ্ছে। বিএনপির সমাবেশগুলো থেকে কী ধরনের নির্দেশনা আসে, সেটা দেখার জন্যই তারা এখন অপেক্ষা করছেন।

দলের কর্মীরা ধারণা করছেন, দুর্গাপূজার পর বিএনপির কর্মসূচী থেকে সরকার বিরোধী বড় ধরনের কর্মসূচী আসবে। তার মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করে তোলা হবে। তারা এখন সেই সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছেন। পাশাপাশি সমমনা বা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করছে বিএনপি। গত কয়েকদিনে এসব দলের সাথে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে তখন এদেরও পাশে পেতে চাইছে দলটি।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, নভেম্বর মাসেই দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নভেম্বর মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হলে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। কারণ এ পর্যন্ত তাদের করা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে তাদের অবস্থান থেকে নাড়াতে পারেনি দলটি।

ঢাকামুখী কর্মসূচি কেনো?
বিএনপির নেতারা বলছেন, ১৮ই অক্টোবর বিএনপির জনসমাবেশ থেকে সরকারকে কোনো একটা আলটিমেটাম বা সময় সীমা বেঁধে দেয়া হতে পারে। সেটা কার্যকর না হলে বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবে বিএনপি। সমাবেশের আগে বিএনপির বেশিরভাগ নেতা তাদের কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে মুখ খুলতে চাননি।দুর্গাপূজা শেষে আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের কথা ভাবছে বলে সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এই জনসমাবেশ থেকে হয়তো সরকারকে কোনো একটি বিষয়ে একটি সময় সীমা বেধে দেয়া হতে পারে। বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি ঢাকামুখী হবে।সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। শক্তি প্রয়োগ করে এগুলো সবই সরকারের পক্ষে ব্যবহার করা হবে। আর বিএনপি সেটিকেই রুখে দিতে চাইছে। সেটা আমরা করতে দেবো না। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলে জনগণের অর্থায়নে... তাই আমাদের অধিকার আছে সেটাকে বাধা দেয়ার। এটাকে প্রতিহত করতে না পারলে তো..জাতি হিসেবেই আমাদের অস্তিত্ব একটা হুমকির মুখে পড়বে। ঢাকামুখী কর্মসূচির মধ্যে যেসব বিষয় থাকতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে অবস্থান কর্মসূচি, ঘেরাও কর্মসূচি ইত্যাদি। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণের উপর ভিত্তি করে এর চেয়েও কঠোর কোনো পদক্ষেপ হতে পারে।

বিএনপির দাবিকে মেনে নেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের আভাস দেখা যায়নি। বরং আওয়ামী লীগ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। তারা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি তাদের দাবিকে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, রাজনীতি কোনো মল্লযুদ্ধ না যে সরকার পাত্তা দিচ্ছে না, আমরা গিয়ে সরকারের উপর অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এমন দল বিএনপি না। আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে এবং মানুষকে নিয়েই কথা বলতে হবে, তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করুক আর যাই করুক। আন্দোলন শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত বিএনপির ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, এই জিনিসগুলোকে বিবেচনায় নিয়েই তাদেরকে কাজ করতে হয় যার মধ্যে বিভিন্ন রকম কৌশল ও বক্তব্য থাকে।

তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে বিএনপি কী ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে এমন প্রশ্নে আলাল বলেন, তফসিল ঘোষণা মানেই নির্বাচন হয়ে যাওয়া নয়। দুই ঘটনার মধ্যে অনেক সময়ের ব্যবধান থাকে। তবে সরকার যদি বিএনপির দাবি না মেনে একতরফাভাবে নির্বাচন ঘোষণা করে তাহলে বিএনপি সর্ব শক্তি নিয়েই তা প্রতিহত করবে। যদি এরকমটা তারা ঘোষণা করে একতরফা শিডিউল, তারপরে আমরা আমাদের যা করার আমরা সর্বশক্তি নিয়েই সেটা করবো। কোনো সন্দেহ নেই।

বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মাঠেও থাকবে বলে দলের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা পুনরায় সচল করা হয়েছে।

ছাড় দিতে হবে?
উচ্চ আদালতের রায়ের পর বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয় ২০১১ সালের মে মাসে। এরপর থেকে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছে। এই দাবির মুখে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। কিন্তু সেই দাবি থেকে সরে এসে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার অংশ নিয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই আচরণ তাদের রাজনৈতিক দাবির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি। যার কারণে এই দীর্ঘ সময়েও বিএনপি তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে এখনো পর্যন্ত সরকারের অবস্থানের কোনো নড়চড় হয়নি এবং সরকারকে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি বিএনপি এখনো তৈরি করতে পারেনি। তাই নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহীউদ্দিন আহমদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারলে বিএনপি শুধু নিজের শক্তিতে সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন করাতে পারবে না। বিএনপির পক্ষে জনমত আছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভোটের রাজনীতিতে তাদের সম্ভাবনা খুবই ভাল। এই সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তার উপর নির্ভর করছে বিএনপির অবস্থার পরিবর্তন কতটা হবে। সরকারের পতন ঘটানো বা সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আসবে, নতুন একটা নির্বাচন কমিশন হবে- এই ব্যাপারটাকে বাস্তবায়ন করার মতো মাঠের শক্তি বিএনপির এখনো আমি দেখি নাই। জনগণ ছাড়াও দেশের আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী, পুলিশও রাজনীতির বড় স্টেকহোল্ডার, এরা যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে যায় তাহলে বিএনপি মাঠে আন্দোলন করে কিছুটা সফলতা অর্জন করতে পারবে। কিন্তু তারা সরকারকে সমর্থন দিয়ে দিলে বিএনপির কোনো আশা নেই। বিএনপি যদি নিজস্ব শক্তিতে সরকারি দলকে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে তাহলে তাদেরকে হয়তো কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনে আসতে হবে।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ফিরে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে অর্থবহ সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে অর্থবহ সংলাপ এবং রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সংলাপের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি কোনো ‘শর্ত’ প্রত্যাহার করলে তারা সংলাপের বিষয়ে চিন্তা করবে। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে আলোচনা না হলে কোনো সমাধান হবে না।

বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ
চলতি বছরের দোসরা অগাস্ট ঢাকায় থাকা ২৫টি দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করে বিএনপি। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে বিএনপি নেতারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বলে জানানো হয়েছিল। একই সাথে ওই বৈঠককে ‘ব্রিফিং’ হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কূটনীতিকদের জানাতে নিয়মিত এই ‘ব্রিফিং’ করবে তারা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় এসেছিল তাদের সাথেও বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে বিএনপি মার্কিন দলটিকে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। ওই বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, তারা নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহীউদ্দিন আহমদ বলেন, আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের অবস্থানটা বিএনপিকে কিছুটা শক্তি যোগালেও তারা নির্বাচনের বাইরে গিয়ে কোনো পরামর্শ দেবে না। বিভিন্ন দেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য দিলেও বিএনপি যে দাবিতে আন্দোলন করছে, সেই নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কোনো বক্তব্য আসেনি। সুতরাং এটা বিএনপির আন্দোলনের জন্য একটা সংকট। তবে বিএনপির নেতারা আশা করছেন, জোরালো আন্দোলনের মাধ্যমে তারা নিজেদের সেই দাবির প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।