| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক ভারত থেকে অনেকে ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চায়


ভারত থেকে অনেকে ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চায়


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     16 October, 2023     09:14 AM    


ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নওর গিলন বলেছেন, বহু ভারতীয় তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এবং এর জন্য আমি আপ্লুত। হামাসের সঙ্গে তার দেশের চলমান যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বহু ভারতীয় ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এত সংখ্যক ভারতীয় যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়েছেন যা দিয়ে আরও একটা বাহিনীই বানিয়ে ফেলা যায়। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। কিন্তু এত সংখ্যক ভারতীয় কেন যুদ্ধে যেতে চাইছেন বা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন?

কী বলেছেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত?
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নওর গিলন বলেছেন, আমার কাছে এটা খুবই আশাপ্রদ ঘটনা, খুবই আবেগের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে আমরা যে মাত্রার সমর্থন পেয়েছি, সেই শনিবার যখন পুরো চিত্রটাই পরিষ্কার হয় নি। তিনি বিশ্বের প্রথম নেতাদের মধ্যে একজন, যারা খুব স্পষ্ট ভাষায় নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছিলেন। এটা আমরা কখনই ভুলব না। ভারতের মন্ত্রী, বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছি। এটা ছবির একটা দিক। দূতাবাসের (ইসরায়েলি দূতাবাস) সামাজিক মাধ্যমগুলো দেখুন। খুবই আশ্চর্যজনক। সবাই আমাকে বলছে যে আমি স্বেচ্ছাসেবক হতে চাই এবং আমি ইসরায়েলের পক্ষে লড়াই করতে চাই- এই শক্তিশালী সমর্থন নজিরবিহীন। আমি স্বেচ্ছাসেবকদের (ভারতীয়দের) সাথে আরেকটি আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) গঠন করতে পারি। শেষের বাক্যটি আক্ষরিক অর্থে বলেন নি হয়ত। কিন্তু ইসরায়েলের ওপরে হামাসের হামলার পর থেকেই অনেক ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী পোস্ট করছেন যে তারা ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চান।

ভারতে ইসরায়েল দূতাবাসের এক্স-হ্যান্ডেলকে ট্যাগ করে যারা ইসরায়েলকে সমর্থন করছেন, তার থেকে কিছু আবার রাষ্ট্রদূতে এক্স হ্যান্ডেলে রিপোস্ট করা হচ্ছে, ধন্যবাদও জানানো হচ্ছে। কিছু সামাজিক মাধ্যমে আবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখতে স্টেডিয়ামে ইসরায়েলের পতাকা তুলে ধরে তাদের প্রতি সমর্থনের ডাকও দিচ্ছেন। বিশ্বকাপের মাঠ থেকে এরকম কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করা হয়েছে। এই সব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অন্যান্য পোস্ট দেখলে আন্দাজ পাওয়া যায় যে এঁদের একটা বড় অংশই হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিম-বিরোধী। সেকারণেই কি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে চাইছেন তারা?

যেমন হামাসের হামলার পরেই যার পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল, নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে দাবী করা সেই চন্দন কুমার শর্মা সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন যে তিনি ‘ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার আদেশ দিলে ভারতের প্রতিটি জাতীয়তাবাদী হিন্দু ইসরায়েলে গিয়ে তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করবে।তারপর থেকে এ ধরনের আরও পোস্ট দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে।

‘ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা’
বিজেপি নেতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলছিলেন, অনেকে ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চাইছে আর তারা হিন্দুত্ববাদের অথবা বিজেপি সমর্থক কী না, তা নিয়ে তার দল এখনই কোনও মতামত দিতে পারবে না। কিন্তু একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমি বলতে পারি যে ইসরায়েলের পাশে যে বহু ভারতীয় দাঁড়াচ্ছেন, তার দুটো দিক আছে। প্রথমত হামলার ভয়াবহতার যে ছবি দেখা গেছে, সেটা বিশ্বের বহু দেশের সঙ্গে ভারতের নাগরিকদেরও নাড়িয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত ভারতীয়দের ইয়াহুদীদের প্রতি একটা সহানুভূতিও আছে। ইয়াহুদীরা তো হলোকস্টের মোকাবিলা করেছে। তারা সবথেকে বেশি অত্যাচারিত হয়েছে গত শতাব্দীতে। আবার ভারত এবং ইসরায়েল দুটোই সুপ্রাচীন সভ্যতা। সেদিক থেকেও ভারতের মানুষদের একটা বড় অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।

হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই কি মুসলিম বিদ্বেষ?
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ অশ্বিনী কুমার মহাপাত্র বিবিসিকে বলেছেন যে হামাস নিজেদের লড়াইটাকে ইসলামের লড়াই হিসাবে তুলে ধরেছে। আর তাই হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম-বিরোধী জায়গা থেকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছে। হামাস আর ইসরায়েলের লড়াইতে ভারতীয়রা দুইভাগ হয়ে গেছেন। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম বিরোধিতার কারণে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। আবার মুসলমানরা হামাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

যদিও অনেক দশক ধরে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষেই থেকেছে, আর ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নব্বই দশকে শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বর মাসে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোট রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। আবার আগামী বছর রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক আরো সংগঠিত করতে হিসাব কষেই ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে মন্তব্য করছে বারবার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও হামাসের প্রথম হামলার দিনেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে ভারত ইসরায়েলের পাশে থাকছে। ওই মন্তব্যে কোথাও ফিলিস্তিন বা হামাসের নাম ছিল না। মোদীর ওই মন্তব্যের ছয়দিন পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ঐতিহাসিকভাবেই তারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে এসেছে এবং সেই নীতির কোনও পরিবর্তন হয় নি। আরব বিশ্বের কাছে ভারতের অবস্থান যাতে স্পষ্ট হয়, তার জন্যই সরকারীভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর পুরনো অবস্থান আবারও জানানো হল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

‘বুলেটটা কী, সেটা জানে এরা’?
বসরপ্রাপ্ত কমান্ডো ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এরা যে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চাইছে, বুলেট কী সেটা জানে এরা আদৌ? এই যুদ্ধে যেতে চাই ইত্যাদির কোনও অর্থ হয় না। সেখানে মিসাইল, রকেট এসব ব্যবহৃত হচ্ছে। তার মুখে দাঁড়াতে পারবে এরা? সামাজিক মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক-ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপরে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছে এরা। যুদ্ধ করার যদি শখই থাকে, তাহলে সেনাবাহিনীতে তো অগ্নিবীর নেয়া হল। ভারতীয় বাহিনীতেই যোগ দিতে পারতো।


সূত্র : বিবিসি বাংলা