| |
               

মূল পাতা জাতীয় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের প্রথম বাংলাদেশ সফর কী বার্তা দিচ্ছে?


বিকালে ঢাকায় আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের প্রথম বাংলাদেশ সফর কী বার্তা দিচ্ছে?


রহমত নিউজ     07 September, 2023     11:04 AM    


প্রথম কোন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় বাংলাদেশ সফরে আসছেন, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে, অন্যদিকে সুুষ্ঠু নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে সের্গেই লাভরভের এই সফর কী বার্তা দিচ্ছে? রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ দুই দিনের এক সফরে বৃহস্পতিবার সাতই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসছেন, এবং এই প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসছেন কোন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে ভারতের দিল্লিতে জি ২০ সম্মেলনে যাওয়ার পথে তিনি এ সফর করছেন তিনি। তার এই সফর হচ্ছে এমন সময়ে যখন গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সরকার। অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা মধ্যে পড়ে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সময়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের মধ্যে দিয়ে রাশিয়া একদিকে যেমন বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্ব এবং সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য আহবান জানাবে, সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তাও দিতে চায় দেশটি।

প্রথম রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ঢাকায় আসার কথা ছিল ২০২২ সালের নভেম্বরে। সে সময় ঢাকায় ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা জোটের একটি সম্মেলনে তার যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল হয়ে যায়। বাংলাদেশের কূটনৈতিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নভেম্বরে মি. লাভরভের সফর বাতিল হলেও দুই দেশের মধ্যে তার সফর নিয়ে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। সেসময় লাভরভের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি এই সফরটি হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার যে সম্পর্ক, সেটা ঐতিহাসিক এবং বর্তমান- দুই প্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের কঠিন সময়ে রাশিয়া সবসময়ে বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। খাদ্যশস্য, সার, জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা আছে। এসব বিবেচনায় এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সফর। রাশিয়া একটা যুদ্ধে জড়িয়ে আছে, পূর্ব-পশ্চিম মেরুকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের একটা প্রচেষ্টা থাকবে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বলেন, বোঝাপড়া বলেন, সেটা বৃদ্ধি করার। যেহেতু বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার অনেক দিনের সম্পর্ক, বাংলাদেশের জন্মের সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের একটা ভূমিকা আছে, সেই হিসাবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. লাভরভের সফরকে নিজেদের জন্য সমর্থন অর্জনের চেষ্টা হিসাবেও দেখার সুযোগ আছে। এই সময়ে অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ খানিকটা সময় নিয়ে বাংলাদেশ সফর করছেন। এক রাত থাকছেন। সেই প্রেক্ষিতে দেখলে এটাকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটা অর্জন হিসাবেই আমি বলবোক।

এখন ঢাকায় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, এ সফরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রতিরক্ষা, গম ও সার আমদানিসহ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে আলোচনা হবে। আর রাশিয়ার তরফ থেকে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হতে পারে যেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্তত চারটি সামরিক চুক্তি থাকার সম্ভাবনার কথা জানা যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য বিনিময়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণের মতো বিষয় রয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাশিয়ায় প্রায় ৬৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, একই সময়ে বাংলাদেশ আমদানি করেছে প্রায় সাড়ে ৪৭ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ থেকে প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, অন্যদিকে রাশিয়া থেকে গম, সার, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি করা হয়ে থাকে।

চাপে দুই দেশ, সমর্থনের খোঁজে উভয় সরকার
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রাশিয়া বিশ্ব রাজনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছে। সেই কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন বন্ধু বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটি অনেকদিন ধরে। অন্যদিকে, সামনের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভেতরেও বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। এমন একটি সময়ে রাশিয়ার মতো বড় একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে নিজেদের প্রতি সমর্থন হিসাবেই দেখাতে চায় বাংলাদেশের সরকার। বাংলাদেশকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবারই তাদের সেই মনোভাবের প্রকাশও দেখা গেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিরোধিতা করে ঢাকার পাশে থাকার রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। সাধারণত কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাশিয়া মন্তব্য না করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কয়েকবার তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যু ঘিরে পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান জানিয়েছে, প্রকাশ্যেই তার বিরোধিতা করেছে রাশিয়া। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন।

সেই সময় ঢাকায় রুশ দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, কিছু দেশ, যারা নিজেদের ‘উন্নত গণতন্ত্র’ বলে দাবি করে, তারা অন্য সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শুধু হস্তক্ষেপই করেনা, এমনকি ব্ল্যাকমেইলও করে। এর ফলে অনেক দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিবৃতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আহ্বানকে ‘নব্য উপনিবেশবাদ’ এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিষয়ে ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করা হয়। যেহেতু কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাশিয়াকে মন্তব্য বা অবস্থান নিতে দেখা যায় না, সে কারণে বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির প্রতি ইঙ্গিত করে রুশ দূতাবাসের বিবৃতি পাঠানোকে 'নজিরবিহীন ঘটনা' বলে কূটনীতি বিশ্লেষকরা বর্ণনা করেছিলেন। এর আগে বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন বা ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়ার তরফ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া শোনা যায়নি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া - দুটি পক্ষে ভাগ হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেকটা নিরপেক্ষ থাকার নীতি নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, যেহেতু বিশ্বে কূটনৈতিক দিক থেকে রাশিয়া একটা চাপের মধ্যে আছে, দেশটি চাইছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে, বিশেষ করে যাদের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে, তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করার। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে বলা যায়, '৭১ সালে রাশিয়ার ভূমিকা ছাড়াও তাদের সাথে বিশাল জ্বালানি সম্পর্ক আছে, প্রতিরক্ষা কেনাকাটা আছে, বাণিজ্যও হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার সহযোগিতাও পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়। রাশিয়ার মতো একটি পরাশক্তির সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখার একটা আগ্রহ বাংলাদেশের থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় যে ধরনের মেরুকরণ হচ্ছে, সব দেশের ওপর নানারকম চাপ আছে। সব দেশই ভূ-রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে।

কূটনীতি বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সের্গেই লাভরভের এই সফরে বাংলাদেশের সরকারকে বার্তা দেয়া হবে যে, নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান যাই হোক, ঢাকার পাশে থাকবে মস্কো। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের সমর্থন চাইবে রাশিয়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। সাথে মিয়ানমারে প্রভাব বাড়ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক- এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশের প্রতি রাশিয়ার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।অন্যদিকে, বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে যে সাম্প্রতিক সময়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সেখানেও রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। তবে এই সুসম্পর্কের সাথেই দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনও রয়েছে।

যেমন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে একটি রুশ জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে দেয়া না হলে, মস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে রুশ সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে। সেই সময় রুশ বার্তা সংস্থা তাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ জাহাজ ভিড়তে না নেয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা দুই দেশের মধ্যে থাকা ঐতিহ্যবাহী বন্ধুপূর্ণ সম্পর্কের বিরোধী এবং এটি দুদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরীন সেসময় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমাদের বোঝাপড়া এতটাই ভালো যে আমরা মনে করি না, জাহাজের বিষয় নিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বন্ধুত্বের পুরনো ইতিহাস
রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের পুরনো ইতিহাস রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ বিপক্ষে অবস্থান নিলেও, সেই সময় রাশিয়া সহায়তা ও সমর্থন করেছে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো ক্ষমতাও প্রয়োগ করেছে রাশিয়া। সেসময় বাংলাদেশের সমর্থনে নৌবহরও পাঠিয়েছিল দেশটি। বিশ্ব রাজনীতিতে সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের প্রতিদানও দেয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার বিপক্ষে চলে যায় কিংবা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। কিন্তু যেসব দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বরাবরই সম্পর্ক রক্ষা করে গেছে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে।

সেখানে কর্মরত রয়েছেন কয়েক হাজার রুশ কর্মী, পাশাপাশি যন্ত্রপাতি এবং বিনিয়োগও আসছে রাশিয়া থেকে। আবার রাশিয়া থেকে আমদানির চেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে যেসব দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি, বাংলাদেশ তার অন্যতম। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যে চারটি প্রস্তাব আনা হয়েছে, তার তিনটিতেই ভোটদানে বিরত থেকেছে বাংলাদেশ। যেসব প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট দেয়নি, তার মধ্যে রয়েছে - গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের একবছর পূর্তিতে শান্তি প্রস্তাব এবং গত এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্তের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের দোসরা মার্চ সামরিক অভিযান বন্ধ ও অবিলম্বে সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার একটি প্রস্তাব আনা হয়। সেখানেও বাংলাদেশ ও ভারত ভোটদানে বিরত ছিল। এর ব্যাখ্যা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংসদে বলেছিলেন, "রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা যখন সেভেন্থ ফ্লিট পাঠায় পাকিস্তানের পক্ষে, রাশিয়া তখন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কাজেই যারা দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে থাকবো। কিন্তু তারা যদি কোন অন্যায় করে, সেটা আমরা মানবো না। আর আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাঁধালো কারা, উস্কানিটা কারা দিলো, সেটাও তো আপনাদের দেখতে হবে। সেজন্য আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু এটা শুধু একটা দেশের পক্ষে, আমরা ভোট দেবো না।

তবে গত বছরের ২৪শে মার্চ ইউক্রেন ইস্যুতে আনা দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনে মানবিক সঙ্কট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুুল অবকাঠামো হিসাবে যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে, সেটির কাজ অব্যাহত রয়েছে।