মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে : জিএম কাদের
রহমত নিউজ ডেস্ক 20 August, 2023 10:33 AM
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় মানুষের কথা বলার অধিকার, সমালোচনার অধিকার এবং গণমাধ্যমের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিত হলেই সরকারকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। আওয়ামী লীগ জনগনের দল হলে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে কেউ জিতবে, কেউ হারবে... এটাই স্বাভাবিক। জনগনের জন্য সত্যিকারের উন্নয়ন করলে আপনাদের ভয়ের কি আছে? সবাই মিলে একটি নির্বাচনী পদ্ধতী তৈরী করা জরুরী, যারা মাধ্যমে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। যাতে মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত হয়। জাতীয় পার্টির ওপর অনেক বিপদ আসবে। রাজনীতিতে টিকতে হলে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সিংহের মত একদিন বেঁচে থাকা বিড়ালের মত হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে উত্তম।
শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে লক্ষীপুরের টাউনহল মাঠে জেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক সাবেক এমপি মোহাম্মদ উল্যার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, এমরান হোসেন মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোহাম্মদ নোমান , ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মোহাম্মদ নোমান ও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু প্রমুখ।
জিএম কাদের বলেন, আমাদের সংবিধান বারবার ভাঙাচোড়া করা হয়েছে। এখন সংবিধান অনুযায়ী শতভাগ ক্ষমতা সরকারের হাতে। এই সংবিধানে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংবিধানে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়না তাই জনগণ মোটেও উপকৃত হয় না। জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করা হয়েছে। এখন একজনের হাতে সব ক্ষমতা কিন্তু জবাবদিহিতা নেই। জনগণের সমালোচনা, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ এর অধিকার থাকলে সরকার জানতে পারে, জনগণের জন্য কিছু কাজ করার সুযোগ থাকে। জনগন ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে পারলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। মানুষের ভোটাধিকার থাকলে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র হতে পারতো না। বিভিন্ন আইন করে মানুষের কথা বলার অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত দিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েছেন। আবার, সাধারণ মানুষের ধারনা ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধা আছে। সাধারণ মানুষ মনে করে ভোট দিলেও সরকার পরিবর্তন করা সম্ভভ নয়। অনেকে বলেন আমরা ভোট দিতে পারি না, ভোট কেন্দ্র দখল করে রাখা হয়। ভোটের অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত করা হচ্ছে। আওয়মী লীগ, তাদের সমর্থক ও সকারের কিছু লোক বাছাই করে সুবিধাভোগী একটি শ্রেনী তৈরী করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে, মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা বিভাজন সৃষ্টি করে সুবিধাভোগি গোষ্ঠি দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার সহ সকল অধিকার হরণ করছে। ভোট কেন্দ্রে ও ফলাফল ঘোষনার জায়গায় দলীয় লোকজন বসিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা করায়ত্ব করেছে। জবাবদিহিতা না থাকায় সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারে না, অজান্তেই অনেক কাজ করে ফেলে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশাল পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে মানুষের অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা বিঘিœত করেছে সরকার। ভোটের অধিকার না থাকলে দেশের প্রতি মানুষের মালিকানা থাকেনা। বাক স্বাধীনতা না থাকণে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার থাকে না।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নাকি বলেছেন আগামী নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের পর আরেকটি যুদ্ধ। আগামী নির্বাচন নাকি হবে মুক্তিযুদ্ধ্রে পক্ষে ও বিপক্ষে। আসলেই আগামী নির্বাচন হবে মুক্তিযুদেø পক্ষে ও বিক্ষে। আমরা বিশ^স করি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ বৈষম্য এবং দেশের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এই বৈষম্য দূর করতে অনেক বছর লাগবে। কেউ পাঁচ হাজার টাকা আয় করতে পারছে না আর কেউ পাঁচশো কোটি টাকা আয় করছে। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ৩ হাজার ৬ শো ৭৯টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। এরমধ্যে ১ হাজার ৫ শো ৫৯টি বাড়ি-ঘর লুট করা হয়েছে। ১ হাজার ৬ শো ৭৮টি মন্দির ও মুর্তি ভাংচুর করা হয়েছে। এতে হিন্দুদের মন্দির ও মুর্তি ভাংচুর করা হয়েছে। হামলায় অন্তত ১১জন মানুষ খুন হয়েছে। রিপোর্ট বলা হয়েছে এই হামলায় জড়িত সবাই আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত দেশ গড়তে পারছেনা আওয়ামী লীগ।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে জিএম কাদের বলেন, শক্তিশালী দল হলেই হবে না, রাজনীতিতে সফল হতে হলে জনগণর পক্ষে রাজনীতি করতে হবে। এমন রাজনীতি দিতে হবে জনগণ যেনো স্বেচ্ছায় আমাদের রাজনীতিতে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আছে। দীর্ঘদিন আমাদের রাজনীতি নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে, ষড়যন্ত্র ্এখনো আছে। কোন দলের বি-টিম হয়ে কিছু সংখ্যক লোক সুবিধা পেতে পারে। এতে জনগনের মধ্যে অবস্থান তৈরী হয় না। দেশের মানুষের মনের কথা বলে রাজনীতি করলেই, মানুষ তা গ্রহণ করবে। সুযোগ সন্ধানী রাজনীতি কখনোই জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হয় না। কষ্ট ছাড়া কোন ভালো কাজ হয় না। যত বেশি ভালো কাজ, তত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ত্যাগ স্বীকারের জন্য জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সামনের দিকে আরো কঠিন দিন আসবে। জাতীয় পার্টিকে কয়েকবার ভাঙা হয়েছে, আবারো ষড়যন্ত্র হতে পারে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঠিক থাকলে, উপরের নেতারা কে কী করলো তা দেশবাসী দেখবেনা। সঠিক রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে আমরা সফল হবো।