মূল পাতা আন্তর্জাতিক হরিয়ানায় হিন্দু মহাপঞ্চায়েতে গো-রক্ষক দলের নেতার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 14 August, 2023 08:23 AM
ভারতের বিজেপিশাসিত হরিয়ানায় পালওয়াল জেলার পোন্ডারি গ্রামে সর্ব হিন্দু সমাজের মহাপঞ্চায়েত (জনসমাবেশ) থেকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশ থেকে বিদ্বেষ বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি হুমকি দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। সমাবেশে এক বক্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনি যদি আমাদের দিকে আঙুল তোলেন, আমরা আপনার হাত কেটে ফেলব।
হরিয়ানার গো-রক্ষক দলের নেতা আচার্য আজাদ শাস্ত্রী পালওয়ালে অনুষ্ঠিত হিন্দু মহাপঞ্চায়েতে উসকানিমূলক ও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি সরকারের কাছে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে নিশ্চিত করা উচিত যে মেওয়াতে ১০০টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। বন্দুক নয় বরং, রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া উচিত। কারণ রাইফেল অনেক দূর পর্যন্ত গুলি চালাতে পারে। এটা একটা ‘করো অথবা মরো’ পরিস্থিতি। তরুণদের রক্ত গরম রাখার কথাও বলেন আচার্য আজাদ শাস্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, এ দেশ ভাগ হয়েছিল হিন্দু-মুসলমানের ভিত্তিতে। এখানেই থেমে থাকেননি আচার্য আজাদ শাস্ত্রী। তিনি বলেন, গান্ধীজির কারণেই এই মুসলিমরা মেওয়াতে থেকে গেছেন। এফআইআর-এ আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমার বিরুদ্ধেও এফআইআর আছে, কিন্তু আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। আপনাদের জেগে উঠতে হবে।’
হিন্দু মহাপঞ্চায়েত সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবিও রেখেছে। সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে এক কোটি টাকা, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় যারাই অবৈধভাবে বাস করছে, সে বাংলাদেশি হোক বা রোহিঙ্গা, তাদের সবাইকে বের করে দিতে হবে। নূহের আশপাশের গ্রামের মানুষজনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ারও বড় দাবি উঠেছে।
গত ৩১ জুলাই হরিয়ানার নূহতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর আজ নুহ-পালওয়াল সীমান্তের পালওয়াল জেলার পোন্ডারি গ্রামে সর্ব হিন্দু সমাজের মহাপঞ্চায়েত হয়েছে। ওই সমাবেশের অনুমতি এই শর্তে দেওয়া হয়েছিল যে এতে কোনও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হবে না, কিন্তু তা হতে পারেনি। মহাপঞ্চায়েতের সময় পুলিশের সতর্কতা উপেক্ষা করে কিছু লোক বিদ্বেষ বক্তব্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। মহাপঞ্চায়েতের আয়োজকদের দাবি, বক্তাদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য সতর্ক করা হলেও কেউ কেউ তা শোনেননি। হরিয়ানার নূহতে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকারদের সুবিচার দিতে এবং ২৮ আগস্ট পুনরায় জলাভিষেক যাত্রা শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মহাপঞ্চায়েতের পরিপ্রেক্ষিতে, বিপুল সংখ্যক হরিয়ানা পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছিল। পালওয়ালের এসপি লোকেন্দ্র সিং বলেন, আমরা অনেক শর্ত দিয়ে অনুমতি দিয়েছি। কেউ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেবে না, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে মামলা করব। কোনো অস্ত্র বা লাঠি বা দাহ্য পদার্থ সঙ্গে আনবে না ইত্যাদি শর্ত দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
হরিয়ানার নূহের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে মহাপঞ্চায়েতের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। গত ৩১ জুলাই, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) ব্রজ মণ্ডল শোভাযাত্রায় একদল জনতার পাথর নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম অধ্যুষিত নূহে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়। সংঘর্ষে মসজিদের একজন ইমাম, দু’জন হোমগার্ডসহ ছয়জন নিহত হন। দিল্লি সংলগ্ন গুরুগ্রামেও বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হয়।
হরিয়ানা সরকার শান্তিভঙ্গ এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ করতে নূহ জেলায় ১৩ আগস্ট রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিসেবার স্থগিতাদেশ বাড়িয়েছে। নূহ জেলায় এর আগে শুক্রবার রাত ১১ টা ৫৯ পর্যন্ত ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিসেবা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
-পার্সটুডে