স্বাস্থ্য ডেস্ক 12 August, 2023 07:15 AM
চিকিৎসদের কাছে আজকাল এমন রোগীও আসছেন যারা হয়তো চোখে ডাবল দেখতে পান অর্থাৎ একটি বস্তুকে তিনি দুটি দেখতে পান কিংবা খাবার খাওয়ার শুরুতে সমস্যা না হলেও খাওয়া শুরুর কিছুক্ষণ পরেই গিলতে সমস্যা বোধ করেন বা গিলতে পারেন না। অনেক সময় দেখা যায়, একটা কাজ শুরুর কিছুক্ষণ পর তিনি আর সেই কাজ করতে পারছেন না। অর্থাৎ কিছুক্ষণ পর তিনি আর তার শরীরে শক্তি পাচ্ছেন না। আবার কখনো দেখা যায়, কথা বলতে বলতে আর কথা বলার শক্তি পাচ্ছেন না এবং কথা আটকে যাচ্ছে কিংবা বলতেই পারছেন না। কারো এসব লক্ষণগুলো থাকলে তাকে অবশ্যই একজন নিউরোলজিস্টের কাছে গিয়ে দেখতে হবে তিনি মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কী-না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুভাষ কান্তি দে বলছেন, মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে এগুলোই বেশি দেখা যায়। সাম্প্রতি এ ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। যদিও দেশে এ ধরণের কত রোগী আছে সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।
মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিস ফাউন্ডেশন অফ আমেরিকা বলছে, এটা একটি বিরল ধরনের নিউরোমাস্কুলার ডিজঅর্ডার। ১৬৭২ সালে অক্সফোর্ডের একজন চিকিৎসক থমাস উইলিস প্রথম এটি সনাক্ত করেন। তবে এর চিকিৎসা আছে। রোগটি মূলত নিউরোমাস্কুলার ট্রান্সমিশনের একটি প্রাথমিক ডিজঅর্ডার। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক আচরণ হলো এর সাধারণ কারণ। সাধারনত রোগীরা পেশীর দুর্বলতার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।
মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিস কী?
এটি মূলত স্নায়ুতন্ত্রের একটি সমস্যা। শরীরে এক ধরণের অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যার ফলে ‘অটোইমিউন রোগের’ তৈরি হয়। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভূলবশত শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলোকে আক্রান্ত করে, যে কারণে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অস্বাভাবিক তৎপরতার ফলে মস্তিষ্ক ও পেশীর মধ্যকার যোগাযোগ প্রভাবিত হয়ে যায়। এর ফলে পেশীর শক্তি ক্রমশ কমে যেতে থাকে। এ কারণে মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিসে কেউ আক্রান্ত হলে দেখা যায় তার চোখের পাপড়ি পড়ে যাচ্ছে এবং কিছুদিন পর দেখা যায় তিনি কোন একটি বস্তুকে দূর থেকে দুটি করে দেখছেন। এর মানে হলো হয়তো দূরে একজন দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিসে আক্রান্ত ব্যক্তি দেখবেন যে দূরে দুজন দাঁড়িয়ে আছে।
অধ্যাপক সুভাষ কান্তি দে বলেন, এ রোগটির শুরুতেই চোখ আক্রান্ত হয়। সেখানেই প্রথম লক্ষণ দেখা যায়। মাসলগুলো শক্তি পায় না। ফলে প্রথমেই পাপড়িগুলো পড়ে যায়। এরপর শুরু হতে পারে ডাবল ভিশন সমস্যা, কোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে অল্প ও মধ্যবয়সী নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। যদিও অনেক সময় বেশি বয়সের পুরুষদেরও এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। রোগটিতে আক্রান্ত হলে একজন ব্যক্তির এমনকি চিরুনি দিয়ে চুল আঁচরাতেও সমস্যা হতে পারে।
বাংলাদেশে চিকিৎসা আছে?
চিকিৎসকদের মতে বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসা ও ঔষধ সবই আছে। তবে লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথেই চিকিৎসা নিলে ঔষধ দিয়ে এটি মোকাবেলা যায়। রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিকেই ঔষধ সেবন করলে কার্যকর ফল পাওয়া যায়। সাধারণত লক্ষণগুলো নিয়ে কেউ চিকিৎসকের কাছে এলেই তিনি পরীক্ষা করে দেখেন যে থাইমাস নামক বিশেষ একটি গ্লান্ডে কোনো টিউমার আছে কি না।
অধ্যাপক সুভাষ কান্তি দে বলেন, ওই গ্লান্ডে কোনো টিউমার থাকলে সেটি আগে ফেলে দিতে হবে। না হলে টিউমারটা আরও ছড়িয়ে পড়ে বিপজ্জনক দিকে যেতে পারে। তাই শুরুতেই অপারেশন করে ওটা ফেলে দিতে হবে, কিন্তু মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিস রোগে আক্রান্তদের সবসময় একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয় যাতে করে শরীরে কোন ধরণের ইনফেকশন না হতে পারে। কারণ একবার ইনফেকশন হলে তখন আবার কিছু নির্দিষ্ট দরকারি ঔষধ সেবন ছাড়া যায় না। অনেক সময় শ্বাসনালীতে ইনফেকশন হয় বা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে খুব বেশি স্ট্রেসের কারণেও অনেক সময় ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।ইনফেকশন হয়ে গেলে সেখান থেকে মায়েস্থেনিক ক্রাইসিস হয়ে যেতে পারে। তখন রোগীকে আইসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। অনেক সময় প্লাজমা পেরেসিস বা শিরা পথে ইমিউনিগ্লোবিন দিতে হয়। তবে সাধারণত যাদের মাইস্থেনিয়া গ্রাভিস আছে তাদের অনেক সময় স্টেরয়েড দিতে হয়। এতে কাজ না হলে ডিজিজ মডিফায়িং ড্রাগ দিলে তা রোগকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। লক্ষণ দেখা পাওয়া মাত্রই নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে এবং এটি করলেই রোগটি থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
সূত্র : বিবিসি