মূল পাতা আন্তর্জাতিক ইউরোপ বাংলাদেশে বিক্ষোভে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ হচ্ছে : এইচআরডব্লিউ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 03 August, 2023 10:45 AM
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সেখানে বিরোধীদের ওপর নিপীড়নমূলক হামলা চালানো হচ্ছে। এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া বিরোধী নেতা–কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, এতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বুধবার (২ আগস্ট) নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে।
বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর পরিচালিত বর্বরোচিত দমন অভিযানকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক না হওয়ার সর্তকসংকেত হিসেবে দেখা উচিত হবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকার বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভালোভাবে অবগত। তাই নিবর্তনমূলক গণগ্রেপ্তার ও সহিংস দমনাভিযানের মধ্য দিয়ে বিরোধীদের অকার্যকর করলে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করার মতো বোকা কোনো ব্যক্তি নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের শেষ দিকে বিরোধীদলীয় সমর্থকদের ওপর বাংলাদেশ পুলিশ নির্বিচার রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। এ সময় বিরোধী সমর্থকদের পিটুনিও দেওয়া হয়েছে। গত ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঘিরে কয়েক দিনে কর্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আট শতাধিক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা দৃশ্যত রাজনৈতিক বিরোধীদের নিশানা করে আটকের চেষ্টা।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিক্ষোভে সহিংসতায় তাঁদের অন্তত ১০০ সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ ও বিরোধী দলের সমর্থকদের সংঘর্ষের ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লোকজনকে পিটুনি ও লাথি মারার মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরস্ত্র মনে হয়েছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন এবং পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ করেছেন। এতে অন্তত ৩২ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক নিপীড়নের এসব ঘটনা ঘটেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সফর চলাকালে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সফর শেষে। পুলিশ বলেছে, ২৯ জুলাই কর্মসূচি পালনে বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সভা-সমাবেশের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তা ছাড়া বিক্ষোভ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ না হলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের মানদণ্ডও মেনে চলতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জরুরিভাবে পুলিশকে বলতে হবে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিবিধান মেনে চলার জন্য। পাশাপাশি এটা স্পষ্ট করতে হবে যে যাঁরা এ ক্ষেত্রে বিধিবিধান মেনে চলবেন না, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রকাশ্যে জোরালোভাবে বলতে হবে যে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কঠোর ও সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে বাণিজ্য–সুবিধাসহ সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে।