| |
               

মূল পাতা জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য কী যোগ্যতা লাগে?


নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য কী যোগ্যতা লাগে?


রহমত নিউজ ডেস্ক     02 August, 2023     02:58 PM    


বাংলাদেশে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম নামে একটি সংগঠন কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে এনে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক’ হিসেবে যেভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে , সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিদেশি নাগরিকরা ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক’ পরিচয়ে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন পক্ষের সাথে বৈঠকের পর গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে এই দলের একজন সদস্য বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের 'সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতার ওপর আস্থা' প্রকাশ করেন। নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। চারজনের এই ‘পর্যবেক্ষকদের’ দলে রয়েছেন আমেরিকা, আয়ারল্যান্ড, চীন ও জাপানের চার নাগরিক।

নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে এমন সময় এই বিদেশি নাগরিকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো যখন নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ক্রমাগত অসন্তোষ জানিয়ে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের উপর আমেরিকা ও ইউরোপের চাপ বাড়ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই চারজন বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে ধারণা করছেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই 'বিদেশি পর্যবেক্ষকরা' এসেছেন। বাংলাদেশে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম-এর ব্যানারে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আনা হয়েছে। এই ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী।

২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আবেদ আলীর উদ্যোগে 'সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন' এর ব্যানারে কয়েকজন 'বিদেশি পর্যবেক্ষক' আনা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিশ্বযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশ্ন ও সমালোচনা থাকলেও 'সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন' নির্বাচনের পক্ষে সনদ দিয়েছিল। কাজেই নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসলে কারা হতে পারে? এবং কোন মানদণ্ডে নির্বাচন পর্যবেক্ষকের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ধারিত হয়? সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ওঠে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক কারা?
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে অথবা ব্যক্তিগতভাবে কাজ করতে পারেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষকের নিরপেক্ষতা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় বলে মন্তব্য করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল আলীম বলেন, যেকোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রধান লক্ষ্য ভোটারের বিশ্বাস (নির্বাচনের প্রতি) বাড়ানো ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচার করা। তাই কোনো পর্যবেক্ষক যদি কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক মন্তব্য করেন তাহলে পর্যবেক্ষকের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট, কার্টার সেন্টার, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি।

সাধারণত নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যাদের দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, নির্বাচনি আইন বা আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কাজ করে থাকে – এমন ব্যক্তিরা সাধারণত নির্বাচন পর্যবেক্ষক হয়ে থাকেন বলে জানিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা উন্নয়ন, রাজনীতি নিয়ে কাজ করে থাকে, সেসব প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে বা সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থায়ন পায় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পযর্বেক্ষক দলে ঐসব দেশের নাগরিকরা থাকবে যারা ইইউ দেশগুলোতে নির্বাচন, গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কাজ করে থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অনেক দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী, বিচারপতি, বিভিন্ন দেশের প্রশাসনে ও নির্বাচন কমিশনে কাজ করা সাবেক কর্মকর্তারা এসেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দলের সদস্য হয়ে। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে বা ব্যক্তিগতভাবে আসা নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা সাধারণত যেই দেশ থেকে আসেন, সেই দেশের অনুমতি নিয়ে এসে থাকেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাজ কী?
নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা কোনো একটি নির্বাচন শেষে প্রতিবেদন দেন যে সেই নির্বাচনটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলো কিনা। অর্থাৎ একটি নির্বাচন গুণগতভাবে কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সেই বিষয়টি উঠে আসে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে।  তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন সাধারণত নির্বাচনের ফলাফল বা নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলে না বলে জানিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল আলীম বলেন, সাধারণভাবে পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনকে পৃথিবীর কোথাও সেভাবে আমলে নেয়া হয় না। ভবিষ্যতের নির্বাচন কীভাবে আরো ভালোভাবে আয়োজন করা যায়, পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সেই বিষয়টি ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন নির্বাচনের ফলেও প্রভাব ফেলার উদাহরণ রয়েছে, কেনিয়ায় ২০১৭ সালের নির্বাচন শেষে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলেছিল যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু সেখানকার স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে উঠে আসে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। পরে আদালত এই পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন আমলে নেন এবং কেনিয়ায় পুনর্নির্বাচন হয়। এছাড়া ২০০৩ সালে আর্মেনিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন আদালতে আমলে নিয়েছিল।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন চলাকালীন পুরো পরিস্থিতি শুধু দেখে যান এবং পরবর্তীতে সেই বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বা কোনো ধরণের অনিয়ম দেখলেও পর্যবেক্ষকরা কোনো পদক্ষেপই নেন না। তাদের কাজ পুরো বিষয়টি দেখে প্রতিবেদন দেয়া। তবে, যে পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলে না। যেমন ক্যাম্বোডিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো বলেছে যে এটি প্রহসনমূলক নির্বাচন হয়েছে। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র ক্যাম্বোডিয়ার নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। কিন্তু এর ফলে নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়েনি।