| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক ভারতের উচ্চাশায় বড় বাধা নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ব?


ভারতের উচ্চাশায় বড় বাধা নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ব?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     26 June, 2023     09:32 PM    


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহে আমেরিকা সফর করে এলেন। আমেরিকা একে রাষ্ট্রীয় সফর বলছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথেও তাঁর দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনাসহ নানা চুক্তি হয়েছে। টেসলা ভারতে গাড়ি তৈরি করবে বলে মোদিকে জানিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এলন মাস্ক। সব মিলিয়ে প্রচারের ঢক্কা নিনাদে গল্পের গরু আসলে কতটা গাছে উঠতে পেরেছে, সেটি ধরিয়ে দিলেন শোয়াইব দানিয়েল তাঁর এক প্রতিবেদনে।

বিশ্বে এই মুহূর্ত সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চাও রয়েছে সেখানে। বিশ্বের ৫ম অর্থনীতির দেশও বটে ভারত। আবার প্রতিবেশি চীনের সাথে সীমান্তসহ নানা ফ্যাসাদও আছে। সব মিলিয়ে ভারত আমেরিকার এক অতি স্বাভাবিক বন্ধু। মোদি না থাকলেও যে এই সম্পর্কে তেমন বেশ-কম হতো এমনটা বলা কঠিন। তবে মোদির সফরের আরেকটা দিক যে উঠে এসেছে, সেটাই হচ্ছে ভয়াবহ। স্ক্রল ডট ইনে সেই উদ্বেগই তুলে ধরেছেন শোয়াইব দানিয়েল।

মোদির সফর নিয়ে শোয়াইব দানিয়েল লিখেছেন, ভারতে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি নিয়ে ৭৫ জন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে চিঠি লিখেছেন। বার্নি স্যান্ডার্সের মতো প্রগতিশীল সিনেটর মুখ খুলে ক্ষান্ত দেননি, কংগ্রেসের যৌথসভায় মোদির ভাষণ বয়কট করেছেন। তাঁর সাথে যুক্ত হয়েছেন ওকাজিও কর্তেজ, ইলহান ওমরের মতো কংগ্রেসওম্যানরা। বলা হচ্ছে, আমেরিকা এখনো কাগজে-কলমে হলেও মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলে থাকে। প্রতি বছরই প্রতিবদেন প্রকাশ করে। এর ওপর সে দেশের অনেক সিদ্ধান্তই নির্ভর করে। এসব সূচকে মোদির ভারতের অবস্থান যে ভালো না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং দিনে দিনে খারাপ হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেকোনো সংবাদ সম্মেলন করেন না বা সেভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না, তা সবাই জানেন। কিন্তু এবার রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। হয়তো অনেকটাই আমেরিকার চাপে। সেখানে তিনি একটির বেশি প্রশ্ন নেবেন না বলে ঠিক হয়। প্রশ্নকর্তা হিসেবে নির্বাচিত হন ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্ট। সবাই জানেন জনপ্রিয় বিজনেস পেপার বা দৈনিক হিসেবেই ওয়ালস্ট্রিট জানার্লের পরিচয়। ফলে এর সাংবাদিক অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বের ৫ম বড় অর্থনীতির দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করবেন, তেমনটাই দস্তুর। কিন্তু কেমন আক্কেল দেখুন, তিনি তা না করে প্রশ্ন করলেন ভারতের সংখ্যালঘুদের অবস্থা ও অধিকার নিয়ে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের সময় হঠাৎ করে আরেক মন্তব্য করে বসলেন মোদির ‘বন্ধু’ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সিএনএনে বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক ক্রিস্টিন আমনপোরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘আমার যুক্তি হলো, ভারতে যদি এথনিক মাইনরিটিদের রক্ষা করা না হয়, তা হলে সে দেশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ যদি বিরাট আকার ধারণ করে, তা হলে কী হতে পারে, তা আমরা দেখছি। ভারতীয় গণতন্ত্র বর্তমানে যেখানে দাঁড়িয়ে, তা নিয়ে এখন ডিপ্লোম্যাটিক লেভেলেও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।’

ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের মালিকানাধীন এই সময় পত্রিকার মতে ওবামা মূলত মনিপুরে চলমান সংঘাত নিয়ে কথা বলেছেন। অথচ দেখুন, ওবামার এই কথার পরপরই বিজেপি নেতারা কীভাবে রে রে করে তেড়ে এলেন। সেখানে সভ্যতা-ভব্যতা কোনো লক্ষণই নেই। প্রথম এলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি টুইট করেছেন, ‘ভারতে অনেকে হুসেন ওবামা আছেন। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার।’ এখানে ওবামার মুসলমান পরিচয় টেনে আনতে বাধেনি মোদির দলের মুখ্যমন্ত্রীর। আর বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া ব্রিগেড তো আছেই। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রশ্নকারী সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকির ‘পাকিস্তানি মুসলমান’ পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে।

— Himanta Biswa Sarma (@himantabiswa) June 23, 2023

সর্বশেষ সংযোজন ভারতের অর্থমন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারমন। ওবামাকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ওবামার আমলে আমেরিকা ছয়টি মুসলিম দেশে বোম্বিং করেছে। ২৬ হাজার বোমা ফেলা হয়েছে। এ কথা বলার মধ্য দিয়ে নির্মলা নিশ্চয় বোঝাতে চেয়েছেন, ওবামা যে এখন এত সংখ্যালঘুপ্রীতি দেখাচ্ছেন, কিন্তু তিনি কী করেছেন? মন্ত্রিসভার এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন তা হিসেবের মধ্যে নিতে হয়। আর এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবার যা করেন, এবারও তাই করেছেন। মৌন থেকেছেন। এখন মৌনতা সম্মতির লক্ষণ কিনা, তা পাঠকই ভালো জানেন। তবে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে শোরগোলের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি ফেরার পথে প্রাচীন সভ্যতার পীঠস্থান মিশর ঘুরে এসেছেন। সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানে তাঁকে ভূষিত করা হয়েছে। এ কারণেই তো নির্মলা বলেই ফেলেছেন, মোদি এই ধরনের যে ১৩টি সম্মান পেয়েছেন, তার ছয়টি এসেছে মুসলিম দেশ থেকে। আবার এই সফরে নরেন্দ্র মোদি মিশরের একটি মসজিদেও গেছেন। সেখানকার মুসল্লিদের সাথে মোলাকাতের ছবিও টুইট করেছেন। কী জানি, হয়তো ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা।তাতে তো গোল থামছে না।

শোয়াইব ড্যানিয়েল লিখছেন, বিশ্ব রাজনীতির কৌশলী খেলায় এই ধরনের মানবাধিকার লংঘনকারী নেতৃত্বের হাত ধরে আমেরিকা এগোতে চাইবে কিনা সন্দেহ। কারণ এর আগেও বিজেপির এক মুখপাত্র নুপুর শর্মার ইসলাম নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যে বিপদে পড়েছিলেন ভারতীয় কূটনীতিকেরা। বিশেষ করে, আরব দেশগুলোতে কর্মরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতরা। তাঁদের ডেকে পাঠানো ও জবাবদিহির মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে পরাশক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টারত ভারত তার এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি নিয়ে এগোতে পারবে কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। মার্কিন সাংবাদিক নোয়া স্মিথের মতে, প্রগতিশীল আমেরিকা মোদির নেতৃত্বাধীন কোনো দেশের সাথে জোট বেঁধে এগোবার ব্যাপারে ভীত। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্রের সূচকে ভারত ক্রমশ নিম্নগামী, যা ভারতীয় কূটনীতিকদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভারত যদি রাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাহলে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যও ধাক্কা খাবে।

ড্যানিয়েল তাঁর লেখার শেষটা করেছেন এভাবে যে, জনসংখ্যা, বৃহৎ অর্থনীতি, সামরিক শক্তি-সব মিলিয়ে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় বড় জায়গা করে নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে মোদির হিন্দুত্ব, যার ফলে দেশটির পূর্ণ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজের জায়গা করে নিতে পারবে না।

সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট