মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিং, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি ছাত্রলীগ নেত্রীর!
রহমত নিউজ 14 February, 2023 02:06 PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। ভুক্তভোগী ফুলপরি ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। র্যা গিংয়ের সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখে বলে অভিযোগ তার।
সোমবার সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দিয়েছে ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, গেল ৮ ফেব্রুয়ারি আমার ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই আমি ৭ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নং রুমে আমার এলাকার (পাবনা) পরিচিত এক আপুর রুমে গেস্ট হিসেবে উঠি। এরপর ১১ ও ১২ তারিখে ২ দফায় আমি হলের আবাসিক ছাত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা আপুর নেতৃত্বে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাবাচ্ছুম আপুসহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন দ্বারা র্যাগিংয়ের নামে চরমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হই। এবং আমাকে বিবস্ত্র করে আমার গোপন ভিডিও ধারণ করে রাখেন। এমনকি তারা আমাকে জীবননাশের হুমকিও প্রদান করেন।
লিখিত অভিযোগের সাথে সংযুক্ত নির্যাতনের বিবরণে ওই ছাত্রী বলে, আমার বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম নামের এক আপু আমাকে দেখা করতে ডাকে কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে তার রুমে যেতে পারিনি। এরপর থেকেই তারা আমার ওপর চড়াও হতে থাকে এবং তাদের রুমে গেলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে এবং হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। তারা অভিযোগ করতে থাকেন তাদের না জানিয়ে কেন হলে উঠেছি। অথচ আমি আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে নয় গেস্ট হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য উঠেছিলাম। এরপর রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় অন্তরা আপুসহ তার সাথে থাকা ৭-৮ জন আমাকে গণরুমে নিয়ে যেয়ে এলোপাতাড়িভাবে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। আপু আমাকে কেন মারছেন বলতে গেলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে থাকেন এবং সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারে। এছাড়া আমাকে বলতে থাকে, আমরা কি করতে পারি জানিস তুই? আমাদের সম্পর্কে তোর কোন আইডিয়া আছে?
আমি কান্না করে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা আমাকে লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, গামছা দিয়ে গলায় প্যাঁচ দিয়ে ধরেন, একটা ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন এবং আমাকে বিবস্ত্র করে সেটার ভিডিও ধারণ করেন। এছাড়া আমাকে বলে যাতে এ বিষয়টা কোনভাবেই বাইরে না যায় আর যদি বলিস তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দিবো। ভিডিওগুলো তাদের সংরক্ষণে আছে। এ সময় অন্তরা বলেন, যদি তুই প্রশাসনের কাছে কোন প্রকার অভিযোগ দিস তাহলে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো। এরপর আমাকে রাত সাড়ে ৩টায় ছেড়ে দেয়। এ কারণে পরেরদিন প্রাণের ভয়ে আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।
এ বিষয়ে সানজিদা চৌধুরি অন্তরা বলেন, ‘আমি যদি তাকে এসব করে থাকি তাহলে সে প্রমাণ করুক। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘প্রথম বর্ষের এক মেয়ে কিছু সিনিয়রদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছিলো কিছু ছাত্রী। পরে আমি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা মিলে বিষয়টি মিটমাট করে দেই। কিন্তু পরে তার সাথে কী হয়েছে এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, ‘আমরা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বরাবরই জিরো টলারেন্স। ওই ছাত্রীর বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। উভয়পক্ষের কথা শুনে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘র্যাগিংয়ের বিষয়টি আমি শুনেছি। র্যাগিংতো একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও র্যাগিং ছিল না। কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়গুলোকে অ্যালাউ করে না। সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ -আরটিভি অনলাইন।