মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন শিক্ষা সমাপনী উৎসবে মদ আনতে গিয়ে আটক জাবি শিক্ষার্থী
রহমত নিউজ 05 February, 2023 10:09 AM
রোগী পরিবহনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ নিয়ে ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসবের (র্যাগ) মদ কিনতে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীসহ মোট চারজন আটক হয়েছেন। মদসহ তাদেরকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজধানীর বংশাল থানা পুলিশ।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বংশাল থানার ঢাকা ব্যাংকের সামনে থেকে ওই দুই শিক্ষার্থী, মদ কেনাকাটায় একজন সহযোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিপন সাহা (২৮), সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী জুয়েল আহমেদ (২৭), কেনাকাটায় সহযোগী জীবন (২৮) এবং ড্রাইভার আসাদুল্লাহ দুলাল (৩৭)।
পুলিশ জানায়, জুয়েল আহমেদ প্রথমে জাবির ৪৪ ব্যাচ পরিচয় দিলেও পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় জুয়েল জাবির ৪৪ ব্যাচে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি। পরবর্তীতে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি জুয়েল জাবির নাটক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে জড়িত ও আবাসিক হলে থাকে। রিপন এবং জুয়েলের সহযোগী অপরজনের নাম জীবন। তার বাড়ি সাভার এলাকায়।
বংশাল থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বলেন, জাবির অ্যাম্বুলেন্সে মদ পরিবহনকালে দুই শিক্ষার্থী, তাদের একজন সহযোগী এবং ড্রাইভারকে আটক করে থানায় দিয়ে দিয়েছি। তারা র্যাগ অনুষ্ঠানের মদ কিনতে এসেছে। আমার ডিউটির সময় শেষ হওয়ায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।
জাবির একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন পরেই জাবির ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসব (র্যাগ ডে) উদযাপন করা হবে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বংশাল এলাকায় মদ কেনার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রোগী আনার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে মাদক কেনা শেষে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন তারা। পথে ঢাকা ব্যাংকের কাছে পৌঁছানোর পর পুলিশ মাদক বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটক করে।
এ বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, দুইজন ছাত্র, ড্রাইভার এবং মদ কেনাকাটায় এক সহকারীকে মদসহ আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। রোববার তাদেরকে কোর্টে তুললে তাদের পরিচয় পুরোপুরি জানা যাবে।
জাবি মেডিকেলে কর্মরত ডাক্তার নিং তম সিং বলেন, ৪৩ ব্যাচের ফার্মেসি বিভাগের অনিক নামে এক শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ নিয়েছে। ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের কাকরাইল শাখা থেকে রোগী পরিবহনের কথা বলে তারা তারা গাড়িটি নিয়ে যায়।
অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ তালিকায় থাকা নাম্বারে কল দিলে অনিক বলেন, আমি অ্যাম্বুলেন্সে আছি। ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছি। ড্রাইভারের ফোন বন্ধ কেন? জিজ্ঞেস করতে তিনি জানান, ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছেন তাই ফোন বন্ধ-এই বলে অনিক ফোন কেটে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামসুর রহমান বলেন, মদসহ ২ শিক্ষার্থী ও ড্রাইভার আটকের বিষয়টি জেনেছি। সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্টারকে অবহিত করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে মাদক পরিবহন করা হয়েছে।
অন্য আরেকটি সূত্র জানায়, র্যাগ উৎসবের পূর্বে এমন ছোট ছোট অনেকগুলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এসব অনুষ্ঠানসহ মূল অনুষ্ঠানে মদ্যপান করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪৩ তম আবর্তনের শিক্ষা সমাপনী উৎসব (র্যাগ ডে) উদযাপনের লক্ষ্যে রাজা-রানী প্রার্থিতা প্রচারে পন্নি খান (দর্শন বিভাগ-৪৩) ও বিপ্লব (উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ-৪৩) শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পাশেই জাকসু প্রাঙ্গণে উচ্চ শব্দে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
৪৩তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসবের (র্যাগের) আহ্বায়ক ইতিহাস বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রীতম আরিফ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। রাজা-রানীপ্রার্থীদের প্রোগ্রাম চলছে। এ বিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, অ্যাম্বুলেন্স যেহেতু চিকিৎসা কেন্দ্রের অধীনে, তারা এ বিষয়টি দেখবে। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
এ বিষয়ে চুক্তিভিত্তিক রেজিস্টার রহিমা কানিজকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে ২০২২ সালের ৪ জুলাই ইউজিসির বেসরকারি শাখার পরিচালক ওমর ফারুকের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-৪৫১৫/২০২২ এর একটি আদেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডে উদযাপনের নামে সব ধরনের অশ্লীলতা, নগ্নতা, ডিজে পার্টি, অশোভন আচরণ, নিষ্ঠুর ও নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড এবং বোলিং অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ৪২ তম আবর্তনের ‘র্যাগ ডে’ তে নাচের পরিবেশনা ও মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। এতে দেশে ও দেশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা দাবি করেছেন। অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে টি-শার্টে আপত্তিকর লেখালেখি ও ছবি এবং মুক্তমঞ্চে হিন্দি গানের সঙ্গে অশ্লীল যুগল নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশজুড়ে সব মহলে সমালোচনা শুরু হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চের সামনেসহ এর আশেপাশের এলাকায় মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহারে বিচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
-আরটিভি অনলাইন