| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন সিলেবাসে সমন্বয় করলে কওমি শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা বাড়বে: শিক্ষা সেমিনারে বক্তারা


সিলেবাসে সমন্বয় করলে কওমি শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা বাড়বে: শিক্ষা সেমিনারে বক্তারা


রহমত নিউজ     25 December, 2022     10:38 PM    


‘পরিবর্তিত চলমান বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থায় কওমি মাদরাসা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সেমিনারে অংশ নিয়ে গবেষক, শিক্ষাবিদ ও আলেমরা বলেছেন, শিক্ষাকে কোনো অবস্থাতেই বেঁধে রাখা সম্ভব নয়। শিক্ষা একটি চলমান প্রবাহ, চলতে চলতে সে নানারূপে নানা বর্ণে নানা ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে চলেছে। তাই যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদরাসার সিলেবাসে আগেও পরিবর্তন এসেছে, ভবিষ্যতেও সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে; কিন্তু সেটি অবশ্যই মহান পূর্বসূরিদের বাতানো পথেই হতে হবে। 

রোববার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর তোপখানা রোডের হোটেল রয়েল প্যালেসে বাংলাদেশ কওমি ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। 

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- বিশ্বখ্যাত ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের উচ্চতর হাদিস বিভাগের প্রধান আল্লামা আবদুল্লাহ মারুফী। তিনি বলেন, শৈশবে মানুষের অন্তরে যা বদ্ধমূল হয়, তার প্রতিক্রিয়া পুরো জীবনে থাকে। সন্তান বড় হয়ে স্কুলে পড়ুক বা মাদরাসায় সেটি পরের কথা, শৈশবেই যেন তার প্রাথমিক কিছু ধর্মীয় জ্ঞানার্জন হয় সেটির গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য মাদরাসা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা গেলে সেটি সবার জন্য উপকারী হবে। দ্বীনিয়াতের মাধ্যমে সর্বস্তরের মুসলমানকে ধর্মীয় শিক্ষার আওতায় আনতে হবে।

আল্লামা মারুফী বলেন, দ্বীনের সহিহ শিক্ষার এই স্রোতধারা হয়তো যুগচাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কখনো কখনো কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করবে; কিন্তু সহিহ তালিমের ব্যবস্থা কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদরাসার সিলেবাসে পরামর্শ সাপেক্ষে কিছুটা সংস্কার হতে পারে। বিভিন্ন কিতাব উর্দু ফার্সির পরিবর্তে বাংলা ভাষায়ও পড়ানো যেতে পারে। মাতৃভাষা সহজ করে লিখে ছাত্রদের পড়ালে বড় একটি সময় বেঁচে যাবে। এ ছাড়া আরবির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা শেখার প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, উপ-মহাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো পরিচালিত হয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শে। দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল- ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি নিত্য নতুন সৃষ্ট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ফিতনা ইত্যাদি থেকে জাতিকে সতর্ক করা এবং মুসলিম জাতিকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে আধুনিক সভ্যতার নামে আগ্রাসনকে রুখে দিয়ে ইসলাম বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তাই যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদরাসার সিলেবাসে আগেও পরিবর্তন এসেছে, ভবিষ্যতেও সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। 

আলোচকরা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্নতার কারণে উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি দেখা দেয় সূচনালগ্ন থেকেই। বিদগ্ধজনরা এই বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিগত এক শ’ বছরেও এর কোনো বিহিত হয়নি। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রস্তাব সামনে এসেছে। সেসব প্রস্তাব সামনে রেখে নিয়মিত আলোচনা পর্যালোচনা হওয়া আবশ্যক। 

দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে কয়েকটি সিলেবাস প্রচলিত রয়েছে উলে­খ করে এগুলোর সমন্বয়েরও দাবি ওঠে আলোচনা সভায়।

বক্তারা বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের কওমি মাদরাসাগুলোতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও বাংলাদেশে একেবারেই থেমে আছে। আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে পারলে বিদেশি ছাত্ররাও বাংলাদেশে পড়তে আসবে। যেটি আমাদের দেশের জন্যও সুনাম বয়ে আনবে। 

আলেমরা বলেন, সম্প্রতি দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের সিলেবাসে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষার্থীদেরকে এসএসসি লেভেল পর্যন্ত জেনারেল সিলেবাস পাঠদান এবং এসএসসি লেভেলের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সার্টিফিকেট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো যেহেতু সবক্ষেত্রেই দেওবন্দের অনুসরণ করে থাকে, তাই এই ক্ষেত্রেও তাদের দেওবন্দের অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়। 

বাংলাদেশ কওমি ছাত্র ফোরামের আহ্বায়ক তানজিল আমিরের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জামিল সিদ্দিকীর পরিচালনায় এতে বক্তৃতা করেন, মাদরাসা দারুর রাশাদ মিরপুরের মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী, নয়া দিগন্তের সিনিয়র সহসম্পাদক ও গবেষক মাওলানা লিয়াকত আলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার সাবেক অধ্যাপক ড. হাফেজ এ বি এম হিজবুল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মুহাদ্দিস মাওলানা ওলিউর রহমান খান আজহারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা হুসাইনুল বান্না, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহতামিম মাওলানা মাসউদুর রহমান ও দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের পরিচালক মুফতি সালমান আহমাদ, কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের খতিব ও আরবি ভাষা প্রশিক্ষক মাওলানা ইউসুফ নূর প্রমুখ।