রহমত নিউজ ডেস্ক 15 November, 2022 09:08 PM
ব্যাংকগুলো পণ্যের প্রকৃত বাজারমূল্য যাচাই করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে না। অর্থপাচার রোধে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
আজ (১৫ নভেম্বর) মঙ্গলবার ক্রেডিট গ্যারান্টি ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন-আইএফসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গভর্নর এ সতর্কবার্তা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংকগুলোর এমডি, সিইও, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ও ক্রেডিট গ্যারান্টি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা।
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) খাত। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সিএমএসএমই খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রয়োজনীয় সহায়ক জামানত না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পান না। এ প্রেক্ষাপটে দেশের সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষি এবং এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ আরও বাড়াতে ব্যাংকগুলোর সিইওদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এছাড়া সিএমএসএমই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিম সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, দেশের একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের কোনো কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে মর্মে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফলে ক্ষুদ্র আমানতদারীদের আতঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপপ্রচারের কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের মিথ্যাচার বন্ধ করতে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে আহ্বান জানান তিনি।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর সিইওদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এলসি খোলার ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিং না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে শিশুখাদ্য, গম, চিনি, ডাল, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর আমদানি যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশনা প্রদান করেন।
সভায় ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, সিএমএসএমই খাতে প্রয়োজনীয় ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উৎপাদন বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বল্প সুদে পুনঃ অর্থায়নে তহবিল গঠন করা হয়েছে। পুনঃ অর্থায়ন স্কিমগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধাও প্রদান করা হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা ছাড়া এসব উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেন তিনি। প্রয়োজনে সিএমএসএমই খাতে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল বাড়ানো হবে এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি কার্যক্রম গতিশীল করতে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে গ্যারান্টি ইস্যু প্রক্রিয়া অনলাইনে চালু করা হবে।
সভায় উপস্থিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ক্রেডিট গ্যারান্টি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মনোজ কুমার হাওলাদার ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা তুলে ধরেন।