| |
               

মূল পাতা সারাদেশ জেলা ‘পুলিশ ভাইদের কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাই, নারায়ণগঞ্জটাকে সেফ করুন’


‘পুলিশ ভাইদের কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাই, নারায়ণগঞ্জটাকে সেফ করুন’


রহমত নিউজ     29 October, 2022     09:47 PM    


নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, এখন বয়স হয়ে গেছে আগের মত পারি না। যদি পারতাম নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদক দূর করে ফেলতাম। আমরা জানি কারা এর সাথে সম্পৃক্ত। তারা আমাদের শেল্টারেই মাদক বেঁচে। আমি পুলিশ ভাইদের কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাই, আমাদের নারায়ণগঞ্জটাকে সেফ করুন। আমরা আছি সাথে, প্রয়োজনে আমরা আপনাদের সাথে লাঠি নিয়ে নামবো। আপনারা চাইলে এটি সম্ভব। আমি যখন ছিয়ানব্বইতে নারায়ণগঞ্জেরে এমপি, তখন নারায়ণগঞ্জে মাদকের ক্লাব ছিল, নাম ছিল ফেনসিডিল ক্লাব। প্রতিদিন ত্রিশ হাজার ফেনসিডিল বিক্রি হতো নারায়ণগঞ্জে। নিষিদ্ধ পল্লীতে ৬ হাজার যৌনকর্মী কাজ করতেন, যাদের বয়স ১১ বছরের নিচে। এগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের পিস্তলের নিশানায় পড়েছি।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূলমন্ত্র, শান্তি-শৃঙ্খলা সর্বত্র’ স্লোগানকে সামনে রেখে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। এরপর আলোচনা সভা শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শামীম ওসমান বলেন, আমি যখন হজে গিয়েছি, তখন পবিত্র কাবাঘর ছুঁয়ে ওয়াদা করেছিলাম, নারায়ণগঞ্জের কলঙ্ক নিষিদ্ধ যৌনপল্লী ও মাদক সমস্যার সমাধান করবো। আপনারা জেনে অবাক হবেন এবং কষ্ট পাবেন, সেই নিষিদ্ধপল্লী থেকে সারা বাংলাদেশের ক্রাইম (সন্ত্রাসী কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ হতো। ওই পল্লীতে ৬ হাজারের বেশি মেয়ে কাজ করতো, যাদের বয়স ১১ বছরের নিচে। প্রতিদিন ওই এলাকায় ৩০ হাজার বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হতো। সেই সময়ে এখানে যারা পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন তাদের আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া চাই, তারা যেন সুস্থ থাকেন। তারা না থাকলে আমি এগুলো বন্ধ করতে পারতাম না। আমার মাদকের আস্তানা উচ্ছেদ করেছিলাম, কিন্তু যৌনপল্লী নয়। যৌনপল্লীর পুনর্বাসন করা হয়েছে।

শামীম ওসমান বলেন, আমি শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য এই কাজ করবো বলে কাবা শরিফে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। দেশে ফিরে যখন এই কাজে হাত দিব তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম, আমি এটা করতে চাই। আপা (প্রধানমন্ত্রী) বললেন কর, আমি বললাম বাঁধা আসবে আপা। তিনি আমাকে সাহস দিয়ে বললেন, ভালো কাজে বাঁধা আসবেই, তুমি এগিয়ে যাও শামীম। প্রচণ্ড বাধা এসেছিল, আপনারা নাম শুনলে ভয় পাবেন। দেশে-বিদেশে এমন কোনো সেক্টর নাই যারা এর সাথে জড়িত ছিলেন না। যারা টেলিভিশনে বসে বড় বড় বক্তব্য দেয় এমন সব লোকেরা এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমি মনে করি সেই কাজটি আমার জীবনের একটি ভালো কাজ ছিল এবং এই কারণেই বোমা হামলায় বেঁচে গেছি।

জেলা পুলিশের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সেই সময়ে যারা এই জেলার দায়িত্বে ছিলেন, তারা প্রতিনিয়ত আমার বাসায় আসতেন এবং কীভাবে এই নারায়ণগঞ্জকে আরও ভালো রাখা যায় সেই বিষয়ে আমরা সমন্বয় করতাম। আমি নিজে তাদের সাথে মাঠে নেমে কাজ করতাম। একবার শীতের রাতে চাদর মুড়িয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম, সেদিন মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে গুলি করার জন্য পিস্তল তাক করেছিল। আমাকে চিনতে পারে নাই। যখন চাদর সরিয়ে দেই তখন দেখে যে, এটা শামীম ওসমান। মাত্র তিন থেকে চার দিনের মধ্যে মাদক বন্ধ হয়ে যায়, তৎকালীন পুলিশ প্রধান (আইজি) আমাকে জরুরি ভিত্তিতে গাড়ি পাঠিয়ে ডেকে ছিলেন। তিনি বললেন আপনাকে মেরে ফেলবে। আমি বললাম কেন? তিনি বললেন সারা বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা এক হয়েছে যে আপনাকে হিট করবে।

তিনি প্রশাসনকে মাদকের অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার সামনে গাজী ভাইসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধারা বসে আছেন। তারা ভয় পাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করে নাই। আমার মেয়ে রাত ১০টার পর বাহিরে থাকলে কেন আমি চিন্তা করবো তাকে নিয়ে, তার নিরাপত্তা নিয়ে। আমরা ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতে চাই। এদেশের মানুষ স্বাধীন, তারা ভয় পেতে চায় না। তারা নিরাপদ জীবন চায়। আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাই, একটি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ শহর। কোথাও যদি কোনো অপরাধী বলে সে আওয়ামী লীগার, তবে তার শাস্তি দ্বিগুণ দেবেন। কারণ সে শেখ হাসিনার দল করে। শেখ হাসিনা অপরাধীদের সাথে আপস করেন না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হয়ে যদি কেউ এই খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে, তবে আমি মনে করি তার এই দলে থাকার কোনো অধিকার নাই।


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: ঢাকা নারায়ণগঞ্জ নারায়নগঞ্জ সদর