মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ মাদরাসা জরিপ নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থান ঘোষণা
আবু সুফিয়ান নাসিম 18 September, 2022 11:41 PM
সরকারি স্বীকৃতিহীন মাদরাসাগুলি নিয়ে সমীক্ষার নির্দেশ জারি করেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের সরকার। এ পরিস্থিতি নির্বাচিত মাদরাসারগুলো নিয়ে সম্মিলিত মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়ার বৈঠক করে এ জরিপ নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থান ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দারুল উলুম দেওবন্দের মসজিদে রশিদ এ প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারতে মাদরাসাগুলোতে অভিযান ও বন্ধের নির্দেশনায় করণীয় নির্ধারণে দেশের মুহতামিমদের সঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ জরুরি বৈঠক করে। জমিয়ত উলোমায়ে হিন্দের নয়াদিল্লির সদর দপ্তরে ‘মাদরাসার নিরাপত্তা’ বিষয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দ, দারুল উলুম ওয়াকফ দেওবন্দ, নদওয়াতুল উলামা লক্ষ্ণৌ, মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুরসহ উত্তর প্রদেশের দুই শতাধিক মাদারসার মুহতামিম ও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন এ সভায়। সভায় উত্তর প্রদেশ সরকারের ১২টি প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে জরিপ তুলে ধরা হয়। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এর কারণ ও রেফারেন্স বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স্বীকৃতিহীন মাদরাসার সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রথমবারের মতো সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দারুল উলূম দেওবন্দ। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর এই সিদ্ধান্তকে শুধু দারুল উলূম দেওবন্দই দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেনি, এই বিষয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর মাদরাসার জিম্মাদারদের একটি সম্মেলন ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র: মাদরাসার ওয়েবসাইট ও আওয়াজ দ্যা ভয়েস
দারুল উলূম দেওবন্দের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত মাদারিসে ইসলামিয়া উত্তর প্রদেশের প্রতিনিধি সভা সুস্থ মনমানসিকতা নিয়ে এদেশে বসবাসকারী সকল দেশের নাগরিকদের কাছে এই সত্য প্রকাশ করা জরুরি বলে মনে করে, দ্বীনি মাদরাসাগুলো পুরো ভারতজুড়ে চলছে। তাদের তালীম-তারবিয়াত এবং জাতীয় ও সামাজিক সেবার একটি উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানসমূহ— যা এদেশে ব্রিটিশদের আধিপত্যের পরে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল; তাদের লক্ষ্য হলো মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদেশীদের আধিপত্য বিস্তার থেকে রক্ষা করা এবং যেকোনো পরাশক্তিকে সমূলে উপড়ে ফেলা। বাস্তবিকই এই দুটি উদ্দেশ্য প্রশংসা অর্জন করেছিলে। একদিকে তা দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘুদের সকল ধর্মীয় প্রয়োজনের যত্ন নিচ্ছে এবং তাদেরকে প্রকৃত মুসলমান ও উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যার বদৌলতে দেশে দায়িত্বশীল পর্যায়ের লোকবল তৈরি হচ্ছে। আলেমদের নেতৃত্বে আপামর মুসলিম জনতা স্বাধীনতার আন্দোলনে স্বদেশীদের পাশাপাশি ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে—যা এদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নীরব সাক্ষ্য বহন করে এবং সকল ঐতিহাসিকরাও তা স্বীকার করছেন।
স্বাধীনতার পরেও এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানসমূহ তার দুর্দান্ত ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। সর্বদা শান্তির আওয়াজ তুলার ফলে দেশ তার মাধ্যমে সুনাগরিক পেয়েছে এবং বিনামূল্যে শিক্ষার মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যার একটি অসহায় ও দরিদ্র অংশ তাদের জীবনকে উন্নত করার সুযোগ পাচ্ছে। মাদারিসে ইসলামিয়ার ইতিহাস হলো তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার এবং তাদের সন্তানরা সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাদ্রাসাগুলোর কঠোর পরিশ্রম ও নির্দেশনার কারণে সারা বিশ্বে ভারতীয় মুসলমানদের একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—যা প্রত্যেক শাসনামলের দায়িত্বশীল সরকার ও মন্ত্রীরা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন। মাদ্রাসাগুলোর উন্নত চরিত্রের একটি সুন্দর দিক হলো তাদের কোনো কার্যক্রমই গোপন নয়। মাদ্রাসার অভ্যন্তরে কারো গমনাগমনের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। যেকারণে গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোও সন্তুষ্টচিত্তে একথা স্বীকার করেছে যে তারা দেশবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পায়নি।
মাদরাসাগুলো নিজ দেশ ও তার আইনের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং সংবিধান ও আইন মেনে চলারও নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। যার ফলে আজো পর্যন্ত কোনো মাদরাসাকে দেশবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত পাওয়া যায়নি। বরং এরচে বেশি স্বচ্ছতা ও সততা প্রমাণ করতে তারা সক্ষম হয়েছে। বাহ্যত কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থতি ঘটলেও এর জন্য সমগ্র মাদ্রাসা বা মাদ্রাসা ব্যবস্থাকে দায়ী করা যায় না। এজন্য সকলের উচিত মাদ্রাসাগুলোর শান্তিপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক চরিত্রকে সামনে রাখা এবং নেতিবাচক বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া। এই সভা মাদরাসার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ এবং মাদ্রাসার দেশপ্রেমিক ও শান্তিপূর্ণ চরিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানায়। এটি দেশ ও দেশে বসবাসকারী সকল জাতির মঙ্গলের জন্য।
আজকের সভা জাতির মেরুদণ্ড মাদারিসে ইসলামিয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য এবং মাদরাসার মর্যাদা নষ্ট করে বা তাদের ক্ষতি করে এমন কোন কথা বা কাজ এড়িয়ে চলার জন্য মুসলিম মিল্লাতের সবার কাছে আবেদন করে। বরং যতটা সম্ভব এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা— যাতে মাদরাসাগুলো মজবুত ও শক্তিশালী হয় এবং দেশে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সভা সকল মাদরাসা ইসলামিয়ার প্রতি আহ্বান জানায় যেন সরকার কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কেউ কোনো ভয় বা মানসিক বিকারগ্রস্ততায় না ভোগেন অথবা কোনো আবেগপ্রবণতা না দেখায়। বরং একে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে শিক্ষা গ্রহণ করা। কাজের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে লক্ষ্য করার মতো কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়:
১. জরিপকারী দলকে সঠিক ও সত্য তথ্য প্রদান করুন, যাতে পরিদর্শনের সময় কোন সমস্যা না হয়।
২. প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ সুশৃঙ্খল রাখুন, হিসাব নিরীক্ষকের দ্বারা বার্ষিক অডিট করান এবং প্রতিবেদনটি সুরক্ষিত রাখুন এবং এই বিষয়ে কোনও ত্রুটি থাকতে দেবেন না।
৩. মাদরাসার ভূমি, সম্পত্তি, মাদ্রাসা পরিচালনা সমিতি বা ট্রাস্টের সঠিক মালিকানা দলিল সংরক্ষণ এবং আইনগত চাহিদা অনুযায়ী মাদরাসার সম্পত্তির নিবন্ধন করে রাখা।
৪. মাদরাসার ছাত্রদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিশেষত: বাথরুম ও শৌচাগারে পরিষ্কার আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করা।