রহমত ডেস্ক 24 July, 2022 04:19 PM
বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী এবং অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছে। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এছাড়া নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে জাসদ।
আজ (২৪ জুলাই) রবিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংলাপে ইসিকে দেওয়া জাসদের লিখিত প্রস্তাবে এসব কথা বলা হয়। দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি ইসি সংলাপে অংশ নেন। সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই নির্বাচন কমিশনের জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য দেওয়া উচিৎ নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারসমূহের নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সংবিধান ও আইন অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রস্তুত থাকা।
১. সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান : জাসদ মনে করে, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রস্তুত থাকা।
২. নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানো : নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই সেই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই নির্বাচন কমিশনের জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য দেওয়া উচিৎ নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়।
৩. নির্বাচন নিয়ে অসাংবিধানিক ও আইন বহির্ভূত দাবিকে প্রশ্রয় না দেওয়া : জাসদ মনে করে, নির্বাচন নিয়ে সংবিধান ও আইন বহির্ভূত কোনো অসাংবিধানিক ও আইনসম্মত নয় এমন কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বা প্রস্তাবকে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ নয়।
৪. নির্বাচন নিয়ে বিদেশী কূটনৈতিকদেও অযাচিত নাক গলানো : জাসদ মনে করে, কতিপয় বিদেশি কূটনৈতিক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী এবং অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী অযাচিত নাক গলানোকে প্রশ্রয় না দেওয়া।
৫. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব : জাসদ মনে করে, জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো সাংবিধানিক, আইনগত ও প্রশাসনিক ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ অন্যান্য নির্বাচনী আইনে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন বা চাহিদা থাকলে নির্বাচন কমিশনের উচিৎ তা সুনির্দিষ্টভাবে আইনসভায় অর্থাৎ জাতীয় সংসদের কাছে উত্থাপন করা। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিও এমন প্রয়োজনবোধ করলে তা আইনসভায় অর্থাৎ জাতীয় সংসদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে উত্থাপন করতে পারেন।
৬.ইভিএম পদ্ধতি : জাসদ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম পদ্ধতি সংযোজনকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানায়। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে বাস্তবে কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। কিছু প্রশ্ন ও বিতর্কও তৈরি হয়েছে। জাসদ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছে। একইসঙ্গে ইভিএম পদ্ধতিতে কারিগরীভাবে ত্রুটিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য কাজ করার পাশাপাশি ব্যালট পদ্ধতিতেও ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।
৭. ভোটার তালিকা : জাসদ মনে করে, বর্তমানে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধনের সমগ্র প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। জাসদ এ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছে। একইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও সংশোধনের জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়াটিকে সহজ এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছে। জাসদ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র একই তথ্যপঞ্জিতে সমন্বিত করা এবং হালনাগাদকৃত তথ্য সবসময় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছে। জাসদ প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
৮. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন : জাসদ গণপ্রতিনিধত্ব আদেশের কঠোর প্রয়োগ করে ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় পরিচয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল এবং এ ধরনের দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। গণপ্রতিনিধত্ব আদেশ অনুযায়ী কঠোর প্রয়োগ করে একই নাম বা কাছাকাছি নামে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছে।
৯. নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার : জাসদ নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে।
১০. নির্বাচনী ব্যয়সীমা ও অবৈধ অর্থের ব্যবহার : জাসদ নির্বাচনী ব্যয়সীমা যৌক্তিকীকরণ এবং আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে অবৈধ অর্থের ব্যবহার বন্ধের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
১১.নির্বাচনকালে নির্বাহী বিভাগের ভূমিকা : নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতো নির্বাহী বিভাগকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যাস্ত, নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন ও অসদাচারণের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
১২. নির্বাচনকালে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভূমিকা : জাসদ মনে করে, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনবোধ করলে নির্বাচনকালে জনপ্রশাসনের কাজে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে ব্যবহার করতে পারবে।