রহমত ডেস্ক 02 June, 2022 07:53 PM
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আমরা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াই না। একটা সমন্বয় করি। সেই সমন্বয়টা সাশ্রয়ী কি না সেটাই আমাদের দেখতে হবে। তবে দামটা কতটুকু সমন্বয় করা হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন দামের বিষয়টি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কোন কিছু করবেন না যা জনগণের জন্য খারাপ হবে। তিনি অবশ্যই এটা লিমিটে রাখবেন।
বৃহস্পতিবার (০২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত এক নাগরিক সভায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সভায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করে আর্থিক ঘাটতি মোকাবিলায় বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি ড. শামসুল আলম।
নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের লক্ষ্য নির্ধারিত করতে হবে কাদের জন্য ভর্তুকি দিতে চাই। আমাদের এক কোটি ৪০ লাখের বেশি জনগোষ্ঠীর বিদ্যুতের মূল্য দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর জন্য ভর্তুকি দেওয়া হয়, তবে আমি ভর্তুকি বলি না, বলি বিনিয়োগ। যাদের আমরা দুই টাকার কিছুটা ওপরে বিদ্যুৎ চার্জ করি। ইনভেস্টমেন্ট এ কারণেই করি, সেই অর্থটা যেন তিনি তার অন্য ক্ষেত্রে ব্যয় করতে পারেন। এই টাকাটা নিজের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কাজে খরচ করতে পারে। এগুলো ভবিষৎতে আমাদের সম্পদ। কৃষির জন্য সারেও ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এজন্যই কোভিডকালেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই সব বিষয়ে ভর্তুকি বলাটা ঠিক না। কিছু অর্থে এটা বিনিয়োগ।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন) পরবর্তী সময়ে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম ঠিক রাখতে অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে। তবে, আমাদের লক্ষ্য নির্ধারিত, কাদের জন্য ভর্তুকি দিতে চাই, কত দর রাখতে চাই। আমাদের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যে মূল্য আসে, তা দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তাই সরকার ভর্তুকি দেয়। তবে আমি ভর্তুকি বলি না, বলি বিনিয়োগ। কারণ তারা এ টাকা যেন নিজের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার কাজে, পুষ্টিকর খাদ্যের কাজে যেন এটা খরচ করতে পারে। সারে ব্যাপক ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তাই কোভিডকালেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির ৫০ বছর এবং জাতির জনকের শতবর্ষে আমরা বলেছিলাম, সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনব। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমরা শতভাগ গ্রিড লাইন করে ফেলেছি। এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে এখন বিদ্যুৎ নেই। অ-গ্রিড এলাকায় আমরা সোলার ও সাবমেরিন কেবল দিয়েছি। এলএনজিতে ৩০ হাজার কোটি টাকা কর দিচ্ছি, এ কর না দিলেই তো হয়ে যায়। বিদ্যুতেও ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো হবে। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
সমুদ্রে গেলেই গ্যাস পাওয়া যাবে, এমন ধারণার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্ভে করার পরও অনেক সময় ড্রিল করে গ্যাস পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন সমুদ্রে গেলে কালই গ্যাস পাওয়া যাবে। এমন ধারণা সঠিক নয়, গ্যাস পেলেও আনতে ১০ বছর সময় লাগবে। সাগরে মাল্টি ক্লেইন সার্ভে হচ্ছে, তারপর দেখব এটা আনা সাশ্রয়ী হবে কি না। ২০০৯ সালে ১১০০ এমএমসি গ্যাস ছিল, এখন ২৫০০ এমএমসি গ্যাস। তারপরও কেন গ্যাসের অভাব! আমরা গ্যাস দিচ্ছি, চাহিদা আরও বেড়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে। এখনও ৫৫০ থেকে ৬০০ শিল্প সংযোগের আবেদন পড়ে রয়েছে। গ্যাস আমদানি করতে খরচ পড়ছে ৫৯ টাকা। গ্যাস বিক্রি করছি ৭ টাকায়।
নসরুল হামিদ বলেন, আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। প্রথম পরিকল্পনা ছিল দ্রুত বিদ্যুৎ দেব। তেল দিয়ে উৎপাদনে গেছি, সেখানে সফল হয়েছি, শিল্পের উৎপাদন বেড়েছে, মানুষের জীবনমান বেড়েছে। শিল্প মালিকরা গ্রামে যেখানে কম দামে জমি পেয়েছে, সেখানে কারখানা করেছে।