মূল পাতা মুসলিম বিশ্ব 'পাকিস্তানকে ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন থেকেই রাজনীতিতে এসেছিলাম'
মুসলিম বিশ্ব ডেস্ক 01 April, 2022 10:48 AM
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটের আগেভাগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘শেষ বল পর্যন্ত আমি লড়াই চালাব।’ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বিরোধীরা।
ইমরান খান বলেন, “দেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। সামনে এখন দুটি পথ আছে। তার মধ্যে একটি পথে চললে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানকে আমরা একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে পাব, আর অপর পথটি আমাদেরকে একটি তল্পিবাহক দাস রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।”
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানকে একটি ন্যায়ভিত্তিক, আত্মমর্যাদাপূর্ণ ও আধুনিক কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন থেকেই রাজনীতিতে এসেছিলাম। যখন আমি রাজনীতি শুরু করি আমার ম্যানিফেস্টোতে তিনটি জিনিস যুক্ত করেছিলাম। তা হলো ন্যায়বিচার। যার অর্থ হলো শক্তিধর এবং দুর্বল সবার জন্য একই আইন কার্যকর থাকবে। থাকবে মানবতা। কারণ, একটি ইসলামি রাষ্ট্রে থাকবে দয়া, সহানুভূতি। তৃতীয়ত থাকবে খুদ্দারি। কারণ, মুসলিম জাতি কোনো দাস হতে পারে না।“
ইমরান খান বলেন, “আল্লাহ যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না থাকতেন তাহলে আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারতাম না। আমি ১৪ বছর চেষ্টা করেছি। লোকজন বার বার আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কেন রাজনীতিতে এলাম। একটি আদর্শের কারণে রাজনীতিতে এসেছি। যখনই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি, তখন থেকে সব সময়ই বলেছি, আমি কারো কাছে আমার মাথা নত করব না। জাতিকেও মাথা নত করতে দেবো না। এর অর্থ আমার জাতিকে কারো দাস হতে দেবো না। এই অবস্থান থেকে কখনো আমি সরে যাইনি।”
ইমরান খান আরও বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীন। এটা হবে পাকিস্তানের জন্য। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা শত্রুতা চাই। যখন আমি সরকার পেয়েছি বলেছি, আমাদের পক্ষে যাবে না এমন কোনো পররাষ্ট্রনীতি আমাদের হবে না।”
ইমরান খান তার ভাষণে উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই তিনি বিরোধীদের সীমাহীন অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ‘ষড়যন্ত্রের’ পেছনে তিন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদের হাত রয়েছে। এরা হলেন শেহবাজ শরিফ, ফজলুর রহমান ও আসিফ আলী জারদারি। এই তিন বিরোধী রাজনীতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চক্রান্তে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেইসাথে তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ কখনও এই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টদের ক্ষমা করবে না।
ইমরান বলেন, ‘সবচেয়ে আপত্তির বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত। প্রকৃতপক্ষে তারা হলো এক একজন ভাঁড় এবং ভাঁড়ের অর্থ হলো বৈধ দাস।’
ইমরান খানের দাবি, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বৈদেশিক চক্রান্ত হচ্ছে এবং ‘হুমকি দিয়ে চিঠি’ পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিকে তিনি নিজের দাবির পক্ষে ‘প্রমাণ’ বলেছেন। দ্য ডন জানায়, ‘হুমকি চিঠি’ নিয়ে কথা বলার সময় ইমরান মুখ ফসকে এর পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম বলে ফেলেছিলেন। পরে তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে নেন তিনি।
ইমরান বলেন, ‘‘আমি আজ এখানে, তার কারণ ৮ মার্চ বা তার আগে ৭ মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে....না, যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমি বলতে চেয়েছি অন্য কোনও একটি ভিনদেশ থেকে আমরা একটি বার্তা পেয়েছি, একটি স্বাধীন দেশের জন্য এই ধরনের বার্তা শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয় বরং এটা একইসঙ্গে দেশের বিরুদ্ধেও।”
যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে ইমরান খান বলেন, তারা আগেই জানত অনাস্থা ভোট হবে। অথচ তখনো অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। এর অর্থ হলো বিরোধীরা বিদেশের এসব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁরা পাকিস্তানের ওপর ক্ষুব্ধ। তাঁরা অজুহাত তৈরি করছে। তাঁরা বলছে, তাঁরা পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেবে যদি অনাস্থা ভোটে ইমরান খান হেরে যান। কিন্তু যদি এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয় তাহলে পাকিস্তানকে কঠিন সময় পার করতে হবে।
-পার্সটুডে