রহমত ডেস্ক 07 March, 2022 11:24 AM
সবাইকে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ অনুসরণ করে তাঁর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের বিশ্বস্বীকৃতি আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গৌরবের স্মারক। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের বিশ্বস্বীকৃতি আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গৌরবের স্মারক। ’৭৫ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত এদেশে এই ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ ছিল, যেমনটা করেছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী- তারাও সেদিন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ ভাষণ প্রচার করতে দেয়নি। কিন্তু সত্য সর্বদাই অনিরুদ্ধ। তাই, নিপীড়িত-নির্যাতিত বাঙালিদের মুক্তির এই মহামন্ত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়- বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হচ্ছে, অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।
আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। বাঙালি জাতির জীবনে ৭ই মার্চ এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে শহিদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রচনা করেছিলেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর আমরা এই মহাভাষণের সুবর্ণজয়ন্তী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ বছর আমরা ভাষা-আন্দোলনের ৭০ বছর এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ, দু’লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে- যাঁদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ। পূর্ব বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং পৃথিবীর মানচিত্রে তাঁদের জন্য একটি স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন এবং সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একমাত্র তিনিই ছিলেন হাজার বছরের শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু, পাকিস্তানিরা আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ না করে নানা টালবাহানা শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে তিনি আমাদের ‘স্বাধীনতা’ নামের এক অমরবাণী শুনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। শুধু তাই নয়, তিনি বীর বাঙালিদের অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উৎকীর্ণ করেন ভাষণের শেষ দু’টি শব্দে- ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে। রাজনীতির কালজয়ী কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন, ক্ষমতাকে কি করে নিয়ন্ত্রিতভাবে সকলের কল্যাণে ব্যবহার করতে হয় তাও বুঝিয়ে দেন, শিখিয়ে দেন আত্মরক্ষামূলক কিংবা প্রতিরোধক সমরনীতি, যুদ্ধকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি। সেই মর্মস্পর্শী বজ্রনিনাদ ৭ কোটি বাঙালির হৃদয়কে বিদ্যুৎ গতিতে আবিষ্ট করেছিল। একটি ব্রিটিশ পত্রিকা বঙ্গবন্ধু ভবনকে ১০-ডাউনিং স্ট্রিটের সঙ্গে তুলনা করেছিল- এমনকি ঢাকায় রাষ্ট্রপতির বাসভবনে বাঙালি বাবুর্চি ইয়াহিয়া খানের জন্য রান্না বন্ধ করে দিয়েছিল। ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মানুষ ইয়াহিয়ার শাসনকে অগ্রাহ্য করে শেখ মুজিবের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। সেই রাতে পাকিস্তানি শাসক তাঁকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বাংলার দামাল ছেলেরা নয় মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বাংলার মাটিতে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন এবং তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তিনি যুদ্ধবিধস্ত দেশটিকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেন। দুর্ভাগ্য, ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ’৭১-এর পরাজিত শত্রুদের এদেশীয় দোসররা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। মুজিব বিহীন বাংলাদেশ কান্ডারিহীন নৌকার মতো হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের দোলাচলে দীর্ঘ ২১টি বছর ভাসতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর খুনি মোস্তাক-জিয়ার আনীত দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার শুরু করে। পরবর্তীতে আমরা ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিন দফা সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করি। জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করি। ফলে জাতি গ্লানিমুক্ত হয়। আমরা সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ প্রণয়ন করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করি। ২০১৩ সালে জ্যাকব এফ ফাইল্ড প্রকাশিত ২৫০০ বছরের বিশ্বসেরা যুদ্ধকালীন ভাষণের সংকলন উই স্যাল ফাইট অন দ্যা বিচেস; দ্যা স্পিচ দ্যাট ইনস্পায়ার্ড হিস্টোরি-এ এই ভাষণ অন্যতম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর এ ভাষণকে ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। শুধু তাই নয়, ইউনেস্কো মনে করে এ ভাষণটির মাধ্যমে জাতির পিতা প্রকারান্তরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।