| |
               

মূল পাতা ইসলাম তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস প্রশান্তি লাভের অনন্য উপায়


তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস প্রশান্তি লাভের অনন্য উপায়


মাওলানা রাদ তানবীর     12 February, 2022     09:31 AM    


সৃষ্টিজগতে যা কিছু আছে, যা কিছু ঘটছে, যা কিছু বিগত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু আসবে সবই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও জ্ঞানের অধীন। আমরা দেখি বা না দেখি আল্লাহ তায়ালা দেখেন। বিপদ-বিজয়, অসুখ-সুখ, ভাল-মন্দ, সফলতা-ব্যর্থতা, জয়-পরাজয় সবকিছু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পূর্ব থেকেই নির্ধারিত। তিনিই নির্ণয় করে রেখেছেন পৃথিবীর অতীত-বর্তমান সবকিছু। প্রতিটি প্রাণের অস্তিত্বের সাথে তিনিই এঁকে দিয়েছেন জীবনের গতি ও বৈচিত্র্যের সম্পূর্ণ চিত্র। একেই বলে তাকদীর বা ভাগ্যলিপি৷ এর প্রতি বিশ্বাস রাখাটাই হলো তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস ও ঈমান। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
انا كل شيء خلقناه بقدر 
অনুবাদ: নিঃসন্দেহে আমি সবকিছুকে সৃষ্টি করেছি নির্দিষ্ট পরিমাপে (সূরা ক্বামার: ৪৯)
ان الله بالغ امره قد جعل الله لكل شيء قدرا 
অনুবাদ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই, তিনি সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা (সূরা ত্বালাক: ৩)

তাকদীর বা ভাগ্যলিপির প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ৷ কোনো কাজে আমরা সফল ও লাভবান হই এটাও যেমন আমাদের তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে, তেমনি কোনো কাজে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটাও তাকদীরে আছে লিপিবদ্ধ৷ প্লেগ, করোনা, কলেরা ইত্যাদি সবই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন৷ তিনিই ভাল-মন্দ ও সুখ-দুঃখের মালিক৷ জীবন চলার পথে আমরা যত বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হই সব তাঁরই অঙ্কিত ছক। এই বিশ্বাসটাকেই বলে তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস৷ এই বিশ্বাসটাই ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক অঙ্গ এবং তার বিশেষ শাখা৷ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
الإيمان أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله و اليوم الآخر و تؤمن بالقدر خيره و شره (رواه مسلم)
ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, (আসমানী) কিতাবসমূহের প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি তোমার বিশ্বাস স্থাপন করা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা ভালো-মন্দ তাকদীরের প্রতি। (সহীহ মুসলিম)
عن علي (رض.) أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لا يؤمن عبد حتى يؤمن بأربع : يشهد أن لا إله إلا الله وأني محمد رسول الله بعثي بالحق و يؤمن بالموت ويؤمن بالبعث بعد الموت ويؤمن بالقدر
অনুবাদ: আলী (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন লোকই ঈমানদার হতে পারবে না যে পর্যন্ত না সে চারটি বিষয়ের উপর ঈমান আনবেঃ (১) সে এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, তিনি আমাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন; (২) মৃত্যুর উপর ঈমান আনবে (৩) মৃত্যুর পর পুনরুথানে ঈমান আনবে এবং (৪) তাকদীরের উপর ঈমান আনবে। (ইবনে মাজাহ)

তাকদীরের শরয়ী গুরুত্ব ও আবশ্যকীয়তা বিবেচনা না করলেও শুধু মানবিক জীবনে তার প্রয়োজন ও আবশ্যকীয়তা অত্যন্ত৷ তাকদীরের প্রতি যারা পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে তাদের হৃদয় কখনও দুঃখিত ও হতাশ হয় না৷ সুখ-সমৃদ্ধির মধ্যেও যেমন তারা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে এবং তাঁর ফায়সালাকে মেনে নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তেমনি দুঃখ ও সংকটের মধ্যেও তারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট থেকে ধৈর্য্য ধারণ করে। তারা পরবর্তী কল্যাণের আশা করে৷ নতুন করে স্বপ্ন বাঁধে৷ কিন্তু তারা আশাহত ও হতাশ হয় না৷ স্বেচ্ছাচার ও সীমালঙ্ঘন করে না৷ জীবনকে ও জীবনদাতাকে ধিক্কার দেওয়ার মত জঘন্য অপরাধে জড়িত হয় না। গ্রহণ করে না আত্মহত্যার মত নিকৃষ্টতম সিদ্ধান্ত।

মোটকথা, তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা যেমন ঈমানের ফায়দা হয়, ঈমানে পরিপূর্ণতা আসে তেমনি মানবিক জীবনেরও আসে কল্পনাতীত উপকার। মানবিক জীবনেও আসে প্রশান্তি, কল্যাণ, সফলতা এবং পরিপূর্ণতা৷ তাই আমাদের উচিৎ তাকদীরের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা৷ ভাল-মন্দ ও সুখ-দুঃখে আল্লাহকে সমানভাবে স্মরণ করা৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দিন৷ আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তাওফীক দিন।