মাওলানা রাদ তানবীর 04 February, 2022 08:44 AM
আমাদের সবার হৃদয়েই আছে নানান লক্ষ্য ও স্বপ্ন। অবস্থা, অবস্থান ও বয়সের বিভিন্নতায় আমাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্যগুলিও বিভিন্ন ধরণের। আমরা প্রতিদিন হৃদয়ে লালিত সেই স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে সজ্জিত করি ভাবনার নতুন নতুন বর্ণে। আমরা সেসব বাস্তবায়ন হওয়ার মুহূর্তটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থনা করি নীরবে হৃদয়ের বর্ণ ও ভাষা দিয়ে। আমরা প্রতিনিয়ত অগ্রসর হতে থাকি সেই স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের মুহূর্তটার দিকে। তেমনি সেই মুহূর্তটাও নিকটবর্তী হতে থাকে আমাদের দিকে। তাতে আমরা পুলক অনুভব করি। পুলকিত হই।
তাছাড়া আমাদের জীবনে আসে সফলতা ও সুখ, ব্যর্থতা ও দুঃখ। সুখ আর সফলতার স্পর্শে আমরা আহ্লাদিত হই। দুঃখ ও ব্যর্থতার সম্মুখীন হলে ভারাক্রান্ত হই। কষ্টে ভেঙ্গে যাই। অবশ্য দুঃখ আর ব্যর্থতাগুলো থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত। সুখ ও সফলতাই থাকে প্রধান আকাঙ্ক্ষা হয়ে। আমরা এই সুখ আর সাফল্যের জন্যও খুব আগ্রহে অপেক্ষা করি। তা প্রাপ্তির জন্য যারপরনাই চেষ্টা করে যাই। আমাদের সামনে যখন কোনো সাফল্যের সময় বা আনন্দের মুহূর্তকে উপস্থিত হতে দেখি তখন হৃদয়ে খুশীর বারি বর্ষণ হয়। প্রশান্তিতে সিক্ত হয় হৃদয়ের প্রতিটি শিরা উপশিরা।
অথচ এই স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণ হওয়া এবং সুখ ও সাফল্য অর্জন হওয়া কোনোটাই সুনিশ্চিত নয়। এগুলো বাস্তবে ঘটবে তা নিশ্চিতভাবে বলাও যায় না, তবে সেগুলো বাস্তবায়ন হোক তা আমরা প্রত্যেকে চাই ও আকাঙ্ক্ষা করি। অনিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও আমরা এসবের পিছে দীর্ঘ সময় ব্যয় করি। তা অর্জনের জন্য চেষ্টা করে যাই অক্লান্ত। ভাবনালয়ে এসবকে দীর্ঘক্ষণ ধরে রেখে তৃপ্তি নেই। এটা মন্দও না। এটা মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্যও বলা চলে। অন্যদিকে আমাদের সামনে রয়েছে 'মৃত্যু' নামক একটি সুনিশ্চিত বিষয়। যা অতি অবশ্যই ঘটবে। যার হাত থেকে রক্ষা পাবে না কোনো প্রাণ। সুপ্রশস্ত ও দুর্ভেদ্য দুর্গে থেকেও রেহাই পাবে না কেউ মৃত্যুর হাত থেকে। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন পাক কুরআনে।
তিনি বলেন,
اينما تكونوا يدرككم الموت و لو كنتم في بروج مشيدة إلخ، (سورة النساء: ٧٨)
অনুবাদ: যেখানেই থাকো তোমরা মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদিও তোমরা আশ্রয় নাও কোনো সুদৃঢ় ও দুর্ভেদ্য দুর্গে। (সূরা নিসা: ৭৮)
তিনি আরও বলেন,
كل نفس ذائقة الموت، (سورة آل عمران:١٨٥)
অনুবাদ: প্রতিটি প্রাণের চাখতে হবে মৃত্যুর স্বাদ। (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)
তিনি আরও বলেন,
منها خلقناكم و فيها نعيدكم و منها نخرجكم تارة اخرى، (سورة طٰه: ٥٥)
অনুবাদ: তা (মাটি) থেকেই সৃষ্টি করেছি তোমাদের, তাতেই ফিরিয়ে নিব আমি তোমাদেরকে (মৃত্যু দিয়ে), এরপর উন্মোচিত করবো তোমাদেরকে পুনরায়। (সূরা ত্বোয়া-হা: ৫৫)
কুরআনুল কারীমে এরকম আরও অসংখ্য আয়াত রয়েছে যা মৃত্যু সুনিশ্চিত হওয়াকে প্রমাণ করে। এছাড়াও প্রতিদিন চোখের সামনে কতজনকে চলে যেতে দেখছি ইহকাল থেকে! কত স্বজনকে চিরবিদায় দিচ্ছি অশ্রুসিক্ত নয়নে! কত মৃত্যুর সংবাদ শুনছি মসজিদের মাইকে! তাদের মত আমার, আপনার, আমাদেরও একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমাদেরও মৃত্যুর সংবাদ ঘোষিত হবে মসজিদের মাইকে। এতে কোনোও সন্দেহ নেই। এটা সুনিশ্চিত ও সবার জানা। সবাই জানি, মৃত্যুর ছোট্ট মুহূর্তটা এসে এঁকে দিবে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ইতিচিহ্ন। সাদা কয়েক টুকরো কাপড়ে দেওয়া হবে আমাদেরকে চিরবিদায়।
আমরা প্রত্যেকে প্রতিদিন অগ্রসর হচ্ছি সুনিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। প্রতিটি মিনিট ও সেকেন্ড কমিয়ে দিচ্ছে মৃত্যুর দূরত্ব। ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুও নিকটবর্তী হচ্ছে আমাদের। একহাত করে করে কমছে দূরত্বের পরিধি। ধীরে ধীরে কাছে আসছে মৃত্যু। তবুও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পারছি না আমরা। মৃত্যুপরবর্তী মানযিলে সুখে থাকার পাথেয় সঞ্চয় করছি না যথাযথভাবে। ভাবনালয়ে মৃত্যুকে ঠাঁই দিচ্ছি না একদম। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখ সমৃদ্ধির উপর প্রাধান্য দিতে পারছি না আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ শান্তিকে। জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও ফিরছি না শয়তানের পথ ছেড়ে রহমানের পথে। করছি না তওবা দিল থেকে পাপের জন্য। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো। আমাদেরকে তোমার গফুর নামক বারিতে সিক্ত করো। তুমি আমাদেরকে তাওফীক দাও পাপকে ঘৃণা করার। তুমি আমাদেরকে তাওফীক দান করো মৃত্যুপরবর্তী মানযিলের জন্য পর্যাপ্ত পাথেয় প্রস্তুত করার।