শিক্ষামন্ত্রীকে হেলিকপ্টারে শাবিপ্রবিতে যাওয়ার আহ্বান আনু মুহাম্মদের

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হেলিকপ্টারে সেখানে যেতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির প্রতি আহ্বান জানালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন। আমরা যে সময়ে রাজধানীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যানজটের কারণে যেতে পারব না, মন্ত্রীর সুযোগ রয়েছে তার চেয়ে কম সময়ে প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে করে সিলেটে যাওয়ার। সিলেটে গিয়ে কথা বলা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতায় সরকারের আরেকটি উদ্দেশ্য, শিক্ষার্থীরা যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আর তাঁরা অধৈর্য হয়ে কোনো কিছু করে বসলে, তা কেন্দ্র করে সরকার তাঁদের দমন করবে। কিন্তু সরকার তরুণদের চেনে না।

আজ (২৪ জানুয়ারি) সোমবার দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গতকাল রবিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ডাবল মাস্ক পরে সিলেটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ।

আনু মুহাম্মদ বলেন, শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে অন্যান্য উপাচার্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি বিষয়টি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে সেটি আমাদের জন্য ভালো খবর। সরকারের উচিত হবে, উপাচার্যেরা পদত্যাগ করার পরপর একটি তদন্ত কমিটি করা। তদন্তের মাধ্যমে তাঁরা কী করেছেন, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা এসেছি শিক্ষকসমাজকে বড় কলঙ্ক থেকে বাঁচাতে। ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় সিলেটে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এখন গোটা শিক্ষকসমাজের সম্মান রক্ষায় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ, কীভাবে উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছে, তা আমরা সবাই জানি।’ তিনি বলেন, যাঁরা সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারবেন, তাঁদের যোগ্যতা তত বেশি। সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রসংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া এখন উপাচার্যের কাজ।

তিনিব আরো বলেন, এসব উপাচার্যের পড়াশোনা, পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখা, গবেষণা—কোনো কিছুতে সময় নেই। কিন্তু সারা দিন বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে করতে যখন মেরুদণ্ড বিলুপ্ত হয়, তারপর তাঁরা উপাচার্য হচ্ছেন। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশে ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দুই শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। সিলেটে সাধারণ ছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলন ছিল, তাঁরা হলে ভালো খাবার পাচ্ছেন না। বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে প্রশাসনের খুশি হওয়া উচিত ছিল যে শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের পুলিশ দ্বারা নির্যাতন করেছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে ঘেরাও সাধারণ বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক তিনি। তাঁর কাছেই তো দাবি জানানো হবে। কিন্তু তাঁদের নির্যাতন করা মানায় না।

কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য দেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিনা লুৎফা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তানজিম উদ্দিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের জোবাইদা নাসরিন, অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরিদি, ইংরেজি বিভাগের তাসনীম সিরাজ মাহবুব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কাজলী সেহরীন প্রমুখ। অনশন কর্মসূচিতে আলোচনা অংশের সঞ্চালনা করেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা।