রহমত ডেস্ক 15 January, 2022 06:18 PM
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে না পারায় সরকার ও প্রশাসনের চারদিকে দুর্নীতির চোরাবালি তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির সিন্ডিকেট সরকারকে ঘিরে ফেলছে। রাজনীতি ও প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় গুন্ডাতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি হলেও, জাতীয় অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়লেও মুক্তবাজার অর্থনীতির ভ্রান্তি ও মোহ থেকে বের হতে না পারা এবং নীতি-কাঠামোগত অন্যায্যতার কারণে সমাজ ও অর্থনীতিতে ভয়ংকর বৈষম্য বেড়েই চলছে।
আজ (১৫ জানুয়ারি) শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর খসড়া রাজনৈতিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। খসড়া রাজনৈতিক রিপোর্টের ওপর আলোচনায় অংশ নেন দলের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন রাঙ্গা, অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল হাই মাহবুব, আবদুল আলিম স্বপন, মো. নুরুন্নবী, গোলাম মারুফ মনা, জাহাঙ্গীর আলম, জসিম উদ্দিন বাবুল, কুমারেশ রায় প্রমুখ।
ইনু বলেন, অতীতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর এ মীমাংসিত মৌলিক রাজনৈতিক বিরোধের সমাধান হয়নি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের পর সরকার গঠিত হয়েছে। ক্ষমতায় থেকেই রাষ্ট্রীয় মদদ দিয়ে বাংলা ভাই, জেএমবির মতো তালেবানি শক্তি তৈরি করেছে বিএনপি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে দলটি ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান, বিরোধের অবসান, সংঘাতের অবসান করে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক শান্তি চাইলে শুধুমাত্র নির্বাচন না, মীমাংসিত মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্নে ঐকমত্য প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু হত্যা, কর্নেল তাহের হত্যা পরবর্তীতে রাষ্ট্র, সংবিধান, রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতিতে যে পাকিস্তানি ধারা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দেশকে আবার সেই ধারায় ঠেলে দেওয়ার রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক অবস্থান নিতে আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশে ক্ষমতার জন্য বিরোধ হচ্ছে, সংঘাত হচ্ছে। এ বিরোধে একপক্ষে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব-ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা, মীমাংসিত মৌলিক বিষয় বিরোধী পাকিস্তানপন্থী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক ধারা, আরেক পক্ষে দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতাসহই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অসাম্প্রদায়িক শক্তি। তাই শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন এ রাজনৈতিক বিরোধ, ক্ষমতার বিরোধের অবসান করে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা দিতে পারছে না। বিএনপি-জামাত ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রশ্নের ফয়সালা করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন, নাকি সরকার উৎখাত?
তিনি আরো বলেন, জাতীয় রাজনীতির এই বাস্তবতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি-ধর্মান্ধ তথা পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি ও তাদের রাজনৈতিক পার্টনার বিএনপি-জামাতকে মোকাবেলায় আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে ঐক্যবদ্ধ সর্বব্যাপক রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ, সঙ্গতিপূর্ণ সাংস্কৃতিক আন্দোলন অব্যাহত রাখা ও জোরদার করা, দুর্নীতির সিন্ডিকেট ও গুন্ডাতন্ত্রকে দমন-ধ্বংস করতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়া থেকে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-গুন্ডাদের বের করে দেওয়া, দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-গুন্ডাসহ অপরাধী যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় রাজনৈতিক সংগ্রাম জোরদার করাই প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য।