রহমত ডেস্ক 12 January, 2022 09:20 PM
একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে চলমান সংলাপে সার্চ কমিটি'র মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন-ইসি ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন সহ পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আজকের সংলাপে অংশ নেয়নি।
আজ (১২ জানুয়ারি) বুধবার বঙ্গভবনের দরবার হলে সংলাপে অংশ নেন চলমান আলোচনার ১৫তম দিনে এনপিপির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ ছালাউদ্দিন সালু এবং মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাই মন্ডলের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মিসেস খালেকুজ্জামান খান দুদু, মো. ইদ্রিস চৌধুরী, মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, আশা সিদ্দিকা, সৈয়দ মাহমুদুল হক প্রমুখ।
পাঁচ প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ১. নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত একটি আইন করার যে নির্দেশনা সংবিধানে আছে, সে অনুযায়ী গত ৫০ বছরেও কোনো স্থায়ী আইন করা হয়নি। এজন্য দেশ ও জাতির স্বার্থে অবাধ, সুষ্ঠু, অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি স্থায়ী আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করছি।
২. নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত না হলে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার সুপারিশ করছি। ৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দক্ষ, সৎ ও নিরপেক্ষ নির্দলীয় ব্যাক্তিবর্গের সমন্বয়ে সংবিধান মতে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং বিশ্বের অন্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও যেন নির্বাচন কমিশন বাস্তবেই স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য আমরা মনে করি, আপনি (রাষ্ট্রপতি) দেশের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিভাবক। দেশের সব ব্যক্তি বিশেষ করে মেধাবী সৎ ও ন্যায়-পরায়ণ দক্ষ ব্যক্তিদের নাম আমাদের চাইতেও আপনি ভালো জানেন এবং চেনেন। তাই ন্যাশনাল পিপলস পার্টি আপনার ওপর আস্থাশীল। আমরা মনে করি, আপনার প্রস্তাব আমাদের প্রস্তাব।
৫. অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তাই বর্তমান বাস্তবতায় সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করছি।
বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, এনপিপি সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। এছাড়া তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সৎ ও নির্দলীয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করার উপর জোর দেন। প্রতিনিধিদল সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন।
এনপিপি প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ও মতবিনিময় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়ক হবে। গণতন্ত্রে যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা ও মতবিনিময় ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়–য়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন ও সচিব (সংযুক্তি) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য ইসি গঠনের বিষয়ে সংলাপের জন্য ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ৩২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের প্রথম দিন ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আজকের সংলাপে অংশ নেয়নি। এ নিয়ে মোট সাতটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। আগামীকাল ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় জাকের পার্টি, সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং রাত ৮টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি। এদিকে আগামী ১৭ জানুয়ারি (সোমবার) বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংলাপের কথা রয়েছে।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং চারজনের বেশি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক মেয়াদে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি একটি নতুন ইসি গঠন করবেন, যার অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।