রহমত ডেস্ক 10 December, 2021 07:58 PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী ৬০৭ জনকে গুম করা হয়েছে, শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। এদের হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আপনারা যদি কোর্টে যান, জেলার আদালতগুলোতে যান, দেখবেন সেখানে আসামি হয়ে আসা ৯০ শতাংশ বিএনপির নেতাকর্মী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মানবাধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন। তার ন্যূনতম চিকিৎসার অধিকার, সেই অধিকার থেকে তিনি বঞ্চিত। আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক। মানবাধিকার ছাড়া গণতন্ত্র রক্ষা হয় না, একইভাবে গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার রক্ষা হয় না।
আজ (১০ ডিসেম্বর) শুক্রবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এতে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটিতে ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুম, খুনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এখানে আপনারা গুম হওয়া পরিবারের কথা শুনেছেন। গত ৮ বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনছি, আমরা শিশুদের কান্না শুনছি। এখনো তাদের শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তার বাবা ফিরে আসবে। এ রকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমাদের বার বার এ কথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, বাংলাদেশে কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের উপর এ দেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ বিচার বিভাগের কাছে মানুষ কোনো বিচার পাচ্ছে না। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যম কর্মী আছেন তারা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেছেন, আমি আগে একটা বাক্য খুব দ্রুত লিখতে পারতাম। এখন একটা বাক্য লিখতে সাত দিন সময় লাগে। বার বার চিন্তা করতে হয় যে, আমি যে বাক্যটা লিখব, যে শব্দগুলো লিখব সেগুলো বিপদ ডেকে আনবে কি না।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালসহ দুইটি সংস্থা এবং বাংলাদেশ অবস্থিত একটি দূতাবাসের প্রতিনিধি সেমিনারে অংশ নেয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্কাইপের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগ্নি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্র দলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সেমিনারে গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শওকত মাহমুদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবু উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, আবদুল মালেক রতন, শিরিন সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।