রহমত ডেস্ক 04 December, 2021 06:27 PM
সড়ক, রেল ও নৌপথে সব শ্রেণীর গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরসহ ২০টি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আজ (৩ ডিসেম্বর) শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা মোশাহিদা সুলতানা, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না, সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরীফুজ্জামান শরীফ, সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।
মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর ঢাকা মহানগরে ১ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। রাজধানীর অনেক বাসে শিক্ষার্থীদের উঠানো হচ্ছে না। অনেক বাস অর্ধেক ভাড়া নেয় না। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দিলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবহন সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সড়কে অব্যবস্থাপনার জন্য তারাই দায়ী। এই সেক্টরের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে নেতৃত্ব দেওয়া পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃত্বের পরিবর্তন জরুরি। এই নেতারা সরকারের সঙ্গে থেকে পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে সরকারের কাছ থেকে নানাভাবে ফায়দা লুটছে।
২০ দফা সুপারিশ : ১. সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে সব শ্রেণির গণপরিবহনে আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সুবিধা নিয়ে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে। ২. ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনে অস্বীকৃতি জানালে, হাফ ভাড়া না নিলে, সংশ্লিষ্ট পরিবহনের চালক, সহকারী, কাউন্টারম্যান, টিকিট বিক্রয়কারীর কী শাস্তি হবে, তা স্পষ্ট করে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করতে হবে। ৩. সব শ্রেণির গণপরিবহন দৈনিক চুক্তিতে ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ভাড়া নির্ধারণের শর্তানুযায়ী মালিক শুধু মুনাফা পাবেন, এটি নিশ্চিত করতে হবে। ৪. সব শ্রেণির গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা যাত্রীদের জন্য স্পষ্ট আকারে, দৃশ্যমান স্থানে টানাতে হবে।
৫. সব পথের গণপরিবহনে মালিকদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ৬. যাত্রীদের কটূক্তি ও যৌন হয়রানিমুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. সরকারি তালিকার অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ায় অস্বীকৃতি জানালে যাত্রীদের কটূক্তি করা, অপমান-অপদস্থ করা, ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ৮. অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের অভিযানে অভিযুক্ত বাসের মালিক, চালক ও সহকারীর পাশাপাশি কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যানকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৯. গণপরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
১০. মালিক সমিতির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া ডাকাতি বন্ধে ওয়েবিল প্রথা বাতিল করতে হবে। মাথা গণনা স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ক্ষেত্রে পুরো পথের ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। ১১. সিটি সার্ভিস ও শহরতলীর বাসের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ গড় বোঝাই ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই বাকি ৩০ শতাংশ আসনে শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি ও দাঁড়ানো যাত্রীদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে। ১২. ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকার ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু দেশব্যাপী চলাচলরত সিএনজিচালিত হিউম্যান হলার, লেগুনা, বাস-মিনিবাসে ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। এসব যানবাহনে সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রীদের ভাড়া নৈরাজ্য থেকে মুক্তি দিতে হবে। ১৩. বাসে ওঠা-নামার সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
১৪. বর্তমান সরকারের গত এক যুগের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কে গতি বেড়েছে, বহু মহাসড়কে দূরত্ব কমেছে। তাই দূরপাল্লার রুটে যাত্রী প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি রুটে দূরত্ব জালিয়াতি ও কিলোমিটার চুরি বন্ধ করে ভাড়ার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ১৫. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ১৬. কথায় কথায় যেকোনো ঠুনকো অজুহাতে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ১৭. যাত্রীর নিরাপত্তায় ফিটনেসবিহিন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহিন চালক উচ্ছেদ করতে হবে। ১৮. ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা, আহত ভুক্তভোগীকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ১৯. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে সরকার ও মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বাতিল করে বাস ও লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২০. নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।