রহমত নিউজ 30 July, 2024 02:12 PM
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন দেশের ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, আন্দোলনকালে শিক্ষার্থীসহ শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নিহত, আহত ও নির্যাতিত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হতে হবে। স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে তদন্তের স্বার্থে তা জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে হওয়া জরুরি। তাই তারা জাতিসংঘকে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
সোমবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকেরা’। তারা ছাত্র-জনতা হত্যা ও জনগণের সম্পত্তি বিনষ্টের নাশকতার পেছনে যেকোনো ধরনের অপরাজনীতির নিন্দা করে বলেছেন, সরকারের বল প্রয়োগে কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এবং খেটে খাওয়া মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় হতাহতের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন। হতাহতের তালিকায় সংবাদকর্মীরাও আছেন।
বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, এত অল্প সময়ে কোনো একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এমন বিপুলসংখ্যক হতাহতের নজির গত একশ বছরের ইতিহাসে (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ বাদ দিলে) এ দেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও মিলবে না। এই বিপুল প্রাণহানির দায় প্রধানত সরকারের। তারা বলেন, এই আন্দোলন চলাকালে নাশকতামূলক তৎপরতার কারণে বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও সামগ্রিকভাবে শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ, শিক্ষামুখী রাখতে কয়েকটি দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নিহত, নির্যাতিত ও আহত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হতে হবে। স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে তদন্তের স্বার্থে তা জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে হওয়া জরুরি। হতাহতদের প্রতি জাতির সহানুভূতি, শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় শোক পালনের ঘোষণা দিতে হবে। প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। যারা চোখ, হাত, পা হারিয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
গণরুম ও টর্চার সেলকেন্দ্রিক নির্যাতনের অবসান ঘটানোর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। পুলিশ ও র্যাবের লাগামহীন হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন- সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন,খুশী কবির, শাহদীন মালিক, রাশেদা কে চৌধূরী, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, হোসেন জিল্লুর রহমান, আনু মুহাম্মদ, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মেঘনা গুহঠাকুরতা, জেড আই খান পান্না, ইফতেখারুজ্জামান, আসিফ নজরুল, শিরিন হক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শামসুল হুদা, বদিউল আলম মজুমদার, সারা হোসেন, পারভীন হাসান, গীতি আরা নাসরিন প্রমুখ।