রহমত নিউজ ডেস্ক 19 September, 2023 09:02 AM
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যে দেশকে রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিলাম, তা এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। আমরা সেই দেশ চাই যেখানে মানুষ বিনা চিকিৎসায় এবং খাদ্যের অভাবে মারা যাবে না। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কারো যদি অসুখ হয়, সে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে নিঃস্ব হয়ে বের হয়। শেখ হাসিনা দেশটাকে নিজের ইচ্ছেমতো শাসন করছেন। তাদের থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য আমরা লড়াই করছি। সরকারের আমার কোনো দলের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্বেষ নেই। তবে আমার পরিবারের ওপর যে আঘাত এসেছে, আমি তা ভুলব না। আমার স্ত্রী ও সন্তানকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হয়। আমার বড় বোন আমাকে বলেন, এবার আর জেলে গেলে ফিরে আসিস না। আমার মতো ৫০ লাখ কর্মী মামলার হয়রানিতে ভুগছে। দেশে এখন কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই, নির্বিচারে অত্যাচার করা হচ্ছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘আদিলুর-এলানের সাজা-সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আদিলুর-এলান এই সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ আইন সরকারের সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে, নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য নয়। সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিদিন যেসব বিদ্বেষমূলক, প্রতিহিংসাপরায়ণ, বিরোধী মত দমনের বক্তব্য দেন, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হওয়া উচিত। সরকার এখন আর রাজপথে মোকাবিলা করতে পারে না। তারা বিরোধী মতকে দমন করার জন্য বিচার বিভাগকে হাতিয়ার বানিয়েছে। বিচার বিভাগসহ সবকিছুকে এই সরকার দলীয়করণ করেছে। তাই এই সরকারকে পরিবর্তন করতে হবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আজকে দেশের এমন অবস্থা, সরকার মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য, মানবাধিকারকর্মীরা যাতে আওয়াজ তুলতে না পারে, সেজন্য আদিলুর-এলানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই সরকার কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডিতে কেউ মারা যায়নি, কোনো হত্যাকাণ্ড হয়নি। বিচার বিভাগ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ সরকার আগের দিন রাতে যা বলে, পরদিন বিচার বিভাগ সেটাই করে। আপনারা প্রস্তুত হোন, সোচ্চার হোন, এই সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে সরাতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু নিজের সুবিধা হাসিল করতে চায়। যারা আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এনেছিল, তারাই আবার ক্ষমতায় গিয়ে সেটাকে সম্পূর্ণ গিলে খেয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। তারা আসলে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র গড়তে চায়। আইনের শাসনের নামে এই ফ্যাসিবাদকে ভেঙে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের জমিদারি সম্পত্তি নয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, আদিলুর-এলান দেশের গুম, খুনের মতো বিষয় তুলে ধরে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিল। আর তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাজা দেওয়া হলো। এই আইনে এই সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। তারা মিথ্যাচার করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইনে রাজনীতিকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের যে স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার বিরুদ্ধে কথা বললে, প্রশ্ন তুললে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লুটপাট, গুম-খুন, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেতনা। এই চেতানা বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললে আপনি অপরাধী হবেন। আপনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে, সাজা হবে। আর আপনি অপরাধী কিনা সেটি ঠিক করছে একজন এসআই। এই আইনের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।