রহমত নিউজ 20 August, 2023 08:11 AM
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে আমেরিকাকে বার্তা দিয়েছে ভারত – ভারতের সংবাদপত্রে এ খবর প্রকাশিত হবার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার 'পক্ষে' আমেরিকাকে দেয়া ভারতের বার্তা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশে 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের' পক্ষে আমেরিকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপর যে চাপ তৈরি করেছে তাতে ভারত এতোদিন পর্যন্ত দৃশ্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ভারত মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে। ভারতের বার্তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দৃশ্যত সন্তুষ্ট। দলটির সাধারণ ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সেটি ফুটেও উঠেছে। অন্যদিকে নাখোশ হয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মির্জা ফখরুল যা বললেন
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতায় বিএনপি দৃশ্যত খুশি হয়েছে। কিন্তু ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হবার পরে বিএনপির তরফ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ যারা গণতন্ত্রের কথা বলে সবসময়, তাদের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত যদি এই নিউজ সত্য হয়ে থাকে। এ কথা আমরা কখনো বলতাম না, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা এই মন্তব্য করছে। বাংলাদেশের মানুষের ‘গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ভারত মর্যাদা’ দেবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত সমর্থন দেবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতাকে এতদিন যাবত ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ মনে করেনি বিএনপি। কিন্তু ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিন্নভাবে দেখছে বিএনপি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে - সাউথ ব্লক মনে করে, জামাতে ইসলামিকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। উদার পরিবেশ যেটুকু রয়েছে, তা-ও আর থাকবে না। জামায়াতে ইসলামীকে ভারত ‘মৌলবাদী শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করে বলে খবরে প্রকাশ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদী ক্ষমতায় আসবে তার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য
আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনার পক্ষে ভারতের অবস্থান নতুন কিছু নয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। বাংলাদেশে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দুটো বিতর্কিত নির্বাচনের পরেও শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দিতে ভারত কোন কার্পণ্য করেনি। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা যে তৎপরতা শুরু করেছে তাতে শেখ হাসিনা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে ভারতের এই কূটনৈতিক বার্তার খবরটি ক্ষমতাসীনদের জন্য স্বস্তি তৈরি করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সেটির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এই অঞ্চল সম্পর্কে একটা মন্তব্য, আজকে খবর নিয়ে দেখুন। বিএনপির নেতা সকল হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে, অভিন্ন ইস্যু, আজকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত ও আমেরিকার এই ভূখণ্ডে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। অভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে তারা একে অন্যকে এই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন। এটা তো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে, নির্বাচনের ব্যাপারে এপর্যন্ত ভারত একবারও বলেনি যে তারা এখানে আমাদের অমুককে চায়, অমুককে চায় না এধরনের কোনো মন্তব্য আমরা ভারত থেকে পাইনি। আর আমরাও জানি, আমাদের ক্ষমতায় বসাবে বাংলাদেশের জনগণ।তারা আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে। গত বেশ কিছুদিন যাবত বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে আমেরিকা যেভাবে তৎপর হয়েছে সেটির খোলাখুলি সমালোচনা করলেও ভারতের অবস্থানকে তারা ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন না।
সূত্র : বিবিসি বাংলা