গত ৫ বছরে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি : শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রতিবছর প্রশ্ন ফাঁসকারীরা অভিনব কায়দা বের করে। আমাদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়। প্রত্যেক বার যা যা ঘটে আমরা কিন্তু তা ভুলে যাই না। সেসবের জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা আমরা করি। আশা করি এবার নতুন কিছু ঘটবে না। নতুন-পুরাতন কোনো সমস্যা এবার থাকবে না -এজন্য সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরপরও আমাদের চোখ-কান খুলে রাখতে হবে। সব কেন্দ্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। এবার প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি নেই। গত পাঁচ বছরে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, তারপরও একটি মহল সবসময় গুজব ছড়িয়ে আসছে। এখন সেই গুজব কমেছে। 

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা সচিব সোলেমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমদ, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামীবছর এইচএসসি পরীক্ষার সময় এগিয়ে এপ্রিলে নিয়ে আসা হবে, আগামী বছর আমাদের চেষ্টা থাকবে এইচএসসি পরীক্ষার সময় এগিয়ে এপ্রিলে নিয়ে আসা। আর এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। এ বছরও সেই চেষ্টাই ছিল, কিন্তু নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।  প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তিন বোর্ডে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব ৬০ দিনের মধ্যে একসঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করতে।  দেশে ডেঙ্গু মহামারি বাড়লেও ডেঙ্গু আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সব পরীক্ষা কেন্দ্রেই ডেঙ্গু আক্রান্ত পরীক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসাসহ বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে পরীক্ষাদের আসতে ভোগান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সময়টা সমন্বয় করলে ভালো হতো। কিন্তু দুইবেলা পরীক্ষা থাকলে পরীক্ষার সময় পরিবর্তনে ঝামেলা হয়ে যায়। এসএসসি পরীক্ষায় সময় পরিবর্তন করে দেখেছি৷ তখন এ সমস্যাটা দেখা গেছে।  আমরা সাধারণত দেখে থাকি কেন্দ্রের গেটেই অভিবাকরা ভিড় জমান, তারা পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে ঢুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে যদি একটু দূরে থাকেন তাহলে এ সমস্যা হতো না। দেখা যায়, একটু পরে যেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন তাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে খুব কষ্ট হয়। আমি অভিবাবকদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা আপনার সন্তানকে কেন্দ্রে নামিয়ে একটু দূরে চলে যান। সেখানে বসে দোয়া করতে থাকুন। 

আজ শুরু হয়েছে দেশের ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা। প্রথম দিনে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা চলছে। এ পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১টায়। ৮টি বোর্ডের ১ হাজার ৩৮৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী। এ বছর একটি বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণসময়ে পরীক্ষা হবে। শুধুমাত্র আইসিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী- এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। অন্যদিকে প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নানান উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো। এরমধ্যে অন্যতম, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা। গত ১৪ আগস্ট থেকে সারাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোচিং বন্ধ রাখা হবে। বৃহস্পতিবার থেকে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এ পরীক্ষা অংশ নিতে মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। তবে বন্যার কারণে চট্টগ্রাম, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়। চারটি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ায় আগামী ২৭ আগস্ট এ তিন বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হবে।