| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক মার্কিন সেনাবাহিনীতে ‘বর্ণবৈষম্যের কারণে’ ট্র্যাভিস কিং উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে গেছেন?


মার্কিন সেনাবাহিনীতে ‘বর্ণবৈষম্যের কারণে’ ট্র্যাভিস কিং উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে গেছেন?


রহমত নিউজ ডেস্ক     17 August, 2023     09:39 AM    


উত্তর কোরিয়া বলছে, মার্কিন সৈন্য ট্র্যাভিস কিং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে “অমানবিক আচরণ এবং বর্ণবৈষম্যের” কারণে গতমাসে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে গেছেন। গত ১৮ জুলাই ২৩ বছর বয়সী এই সৈন্য গাইডেড ট্যুরে থাকার সময় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় চলে যান। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বলছে, মার্কিন সৈন্য ট্র্যাভিস কিং অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং তিনি সেদেশে আশ্রয় চেয়েছেন। মার্কিন এই সৈন্যের উত্তর কোরিয়ায় চলে যাওয়ার পর পিয়ংইয়ং-এর পক্ষ থেকে এই প্রথম তার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হলো।

কিভাবে পালিয়ে যান
ট্র্যাভিস কিং শত্রুপক্ষের অবস্থান ও শক্তি জানার ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন। এই কাজের অংশ হিসেবে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছিলেন। সীমান্ত পার হওয়ার আগে ট্র্যাভিস কিং-এর বিরুদ্ধ আনীত এক ‘হামলার’ অভিযোগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার কারাগারে দু’মাস বন্দী ছিলেন এবং ১০ই জুলাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল, ফিরে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই তিনি বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী সৈন্যমুক্ত এলাকা দেখতে যাওয়া পর্যটকদের একটি দলে যোগ দিতে সক্ষম হন। এই এলাকা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আলাদা করেছে, যা সারা বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাগুলোর একটি। এখানে স্থল-মাইন পোঁতা রয়েছে। এছাড়াও এর চারদিক ঘিরে রয়েছে ইলেকট্রিক ও কাঁটাতারের প্রাচীর। নজরদারি ক্যামেরা দিয়ে এই এলাকাটি পর্যবেক্ষণ করা হয়।এর চারপাশ ঘিরে সশস্ত্র রক্ষীদের ২৪ ঘণ্টা সতর্ক থাকার কথা থাকলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ট্র্যাভিস কিং যেদিন সীমান্ত পার হয়ে চলে যান সেদিন সেখানে উত্তর কোরিয়ার কোনো সৈন্য উপস্থিত ছিল না।

উত্তর কোরিয়ার বক্তব্য
ট্র্যাভিস কিং-কে নিয়ে উত্তর কোরিয়ার পরিকল্পনা ব্যাপারে পিয়ংইয়ং-এর পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। তবে তারা বলছে যে তিনি 'বেআইনিভাবে' উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের কথা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একজন গবেষক ক্রিস্টোফার গ্রিন বলছেন, উত্তর কোরিয়া যে তার “অবৈধ প্রবেশের” কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করছে, সেটা থেকে বোঝা যায় ট্র্যাভিস কিং চাইলেও পিয়ংইয়ং তাকে সেদেশে থাকতে দেওয়ার কথা ভাবছে না। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদি এরকম কিছু হয়, উত্তর কোরিয়ার কাছে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যাবে, তবে তিনি এও বলেন যে ট্র্যাভিস কিং-কে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া এখনই তাড়াহুড়োও করবে না।

উত্তর কোরিয়ার বিবৃতিতে ট্র্যাভিস কিং-এর বিচার কিম্বা তার শাস্তির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এছাড়াও বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা কেমন- এসব বিষয়েও তাতে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। কেসিএনএ-র রিপোর্টে একথা উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তের সময় ট্র্যাভিস কিং স্বীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে অমানবিক আচরণ এবং বর্ণবৈষম্যের কারণে তিনি খারাপ বোধ করছিলেন এবং একারণে তিনি উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি আরো বলেছেন যে আমেরিকার সমাজে যে ধরনের অসাম্য বিরাজ করছে তাতে তার মোহভঙ্গ ঘটেছে এবং একারণে তিনি উত্তর কোরিয়ায় অথবা তৃতীয় কোনো একটি দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করতে চেয়েছেন।”

ওয়াশিংটন কী বলছে
ওয়াশিংটন বলেছে, তারা এখনও এই দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেনি। ট্র্যাভিস কিং-এর উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল, কারণ এই ঘটনার পরে তার কাছ থেকে কিছু শোনা যায়নি এবং তাকে কোথাও দেখাও যায়নি। জাতিসংঘ কমান্ডের সহযোগিতা নিয়ে তার মুক্তির জন্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই জাতিসংঘ কমান্ড দু'দেশের সীমান্ত এলাকা পরিচালনা করে। তাদের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর ফোনে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার মন্তব্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এখন ট্র্যাভিস কিংকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এজন্য সম্ভাব্য সবকটি উপায় বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। এই দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই।

এখন কী হবে
ট্র্যাভিস কিং-এর পরিবার থেকেও এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছিল যে তিনি সেনাবাহিনীতে বর্ণবৈষম্যর শিকার হচ্ছেন। তারা আরো জানিয়েছেন যে দক্ষিণ কোরিয়ার কারাগারে থাকার পর তার মানসিক অবস্থারও অবনতি ঘটেছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন যে তারা অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়া বিশ্বের গুটিকয়েক নামমাত্র কমিউনিস্ট দেশগুলোর একটি, যেখানে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হয় এবং দেশটির সমাজও সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। দেশটির নেতা কিম জং-আনের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্র্যাভিস কিং-কে আটক রাখার ঘটনা উত্তর কোরিয়ার যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী বার্তারই একটি অংশ এবং এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটল যখন দুটো দেশের সম্পর্ক গত কয়েক বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যেই উত্তর কোরিয়া এখন আমেরিকার সমাজে বর্ণবৈষম্য এবং অন্যান্য দুর্বলতার বিষয়গুলো তুলে ধরার এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইবে।

উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ২০১৭ সালের পর এই প্রথম জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এই বৈঠকের আগে ট্র্যাভিস কিং-এর ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এধরনের বক্তব্য দেওয়া হলো।