রহমত নিউজ 12 August, 2023 07:21 AM
বিএনপির ফতুল্লা থানা ইউনিটের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু এখন তার চোখ দুটো বাঁচাতে সংগ্রাম করছেন। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীর দিনে সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের ছররা গুলিতে দুই চোখেই মারাত্মক জখম হয় তার। তিনি এক চোখে কিছুই দেখছেন না আরেক চোখে দেখছেন সামান্য। বিএনপির দাবি ২৯ জুলাই দলের অবস্থান কর্মসূচীর দিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৫শ কর্মী সমর্থক আহত হয়েছে। এছাড়া দলের ১২৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন বিএনপি কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশেরও বেশকজন সদস্য আহত হয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা জানান, বিএনপির কর্মসূচীতে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় শহীদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিএনপির কর্মী সমর্থকরা অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয় এবং সংঘর্ষ বাধে। ওইদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ৭১ রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে শহিদুল ইসলাম টিটুর স্ত্রী আফরোজা ইসলাম বলেন, কেন গুলি করেন, আর কোনো কিছু নাই? মানুষরে ভয় দেখানোর মতো আরো তো অনেক উপায় আছে কিন্তু গুলি করতে হবে কেন? যেটাতে মানুষের ক্ষতি হয়, জীবন চলে যায়।
উদ্বিগ্ন মানবাধিকার কর্মীরা
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশের অ্যকশনের সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘অতিরিক্ত বল প্রয়োগ’ না করারও আহবান জানিয়েছে। বাংলাদেশের বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বরাবরই সমালোচনা রয়েছে। বিরোধী দল ও মতের রাজনৈতিক কর্মসূচী বা আন্দোলনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নানারকম ঝুঁকি রয়েছে বলেই মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়টি উদ্বেগের। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে কর্মীদেরকে বেপরোয়াভাবে পেটানো হচ্ছে, এই জায়গায় আসলে সংযত হতে হবে। যেমন যেখানে দুজন মানুষকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব বা আটক করে ফেলেছে তারপর তো আর পেটানোর দরকার নাই। এই ধরনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং স্বেচ্ছাচারিতার ফলে বহির্বিশ্বে আমাদের পুলিশি রাষ্ট্রের মতো বিবেচনা করা হয় এবং সেখানে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বলি বা রাষ্ট্র পরিচালনার যে ব্যবস্থা বলি, সেটাকে দুর্বল ভাবে মানুষ। প্রথম এবং প্রধানত স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে একটা বাধা হয়। লক্ষ্য করেছি যখন পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে কোনো সভা সমাবেশ ভেঙ্গে দিতে চায়, তখন দেখা যায় সভা সমাবেশে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা বা যে সমস্ত সাধারণ নাগরিক থাকে তারাও কিন্তু তখন ইট হাতে নিয়ে নেয়, লাঠি হাতে নিয়ে নেয়। তখন সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পুলিশের ব্যাখ্যা
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীতে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আমাদের এপিসির ওপর আক্রমণ হয়েছে। আমাদের প্রায় পঞ্চাশ জন সদস্য আহত এবং বত্রিশজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বিএনপির উছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আমাদের একজন জয়েন্ট কমিশনার ট্রাফিকের হাত ভেঙ্গে গেছে। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ নিয়ে ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যে বলে আমরা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করি। আমরা তাদের এই উদ্বেগের জায়গায় আমাদের অবস্থান পরিস্কার করে বলতে চাই পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেনি। আমরা আমাদের নিজেদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে যতটুকু বলপ্রয়োগ করা দরকার ততটুকুই করেছি। সেখানে কিন্তু ভারি কোনো অস্ত্র আমরা ব্যবহার করিনাই।
বাংলাদেশে সব সরকারের আমলেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীকে ঘিরে পুলিশের কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। অভিযোগ ওঠে পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের। বিরোধী দলে গেলে সবাই পুলিশকে ক্ষমতাসীন দলের হাতিয়ার হিসেবেই সমালোচনা করে।
এনিয়ে ফারুক হোসেন বলছেন, পুলিশের জন্য আইনের অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। সেই আইনের ভেতরে থেকেই পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দায়িত্ব পালন করতে গেলে অনেক সময় বিরোধীদল মনে করে যে আমরা সরকারের প্রতি ইনক্লায়েন্ড এখন ওই বিরোধীদল যখন সরকারে ছিল তখন পুলিশ কী ভূমিকে নিয়েছে সেটা যদি আমরা খতিয়ে দেখি- তখনো পুলিশ কিন্তু একইরকম ভূমিকায় ছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে যদি যানমালের নিরাপত্তার হুমকি হয়, ভাঙ্গচুর হয়, আগুন সন্ত্রাস হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ ভূমিকা রাখবে এবং এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে এটাই পুলিশের দায়িত্ব।
বাংলাদেশে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা যায়। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর কোনো দলই পুলিশকে একটি পেশাদার, রাজনীতি ও গণবান্ধব বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন সংস্কার করে যুগোপোযোগী করেনি।