মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনী ‘প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে’ : ইমরান খান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 05 August, 2023 05:43 PM
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ও গ্রেফতার হবার আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘প্রচণ্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে।
ইমরান খানকে শনিবার একটি দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আদালতে এ রায় ঘোষণার কিছু পরই ইমরান খানকে তার লাহোরের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এর এক দিন আগেই বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে এবং অভিযোগ করেন যে 'ফ্যাসিবাদীরা' একে ‘অন্ধকার যুগের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত ফ্যাসিস্টরা দেশটা দখল করে নিয়েছে, একইসঙ্গে তারা নির্বাচনের ভয়ে ভীত। আমি ভুগছি কারণ তারা জানে যে নির্বাচনে আমরা জয়ী হব। আর এই কারণেই তারা গণতন্ত্রকে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
ইমরান খান ২০১৮ সালে নির্বাচিত হবার পর চার বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। সংসদীয় অনাস্থা ভোটে গত বছর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। হার্ডটক উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর থেকেই কি রাজনীতিতে 'সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ' নিয়ে তার সমালোচনা শুরু হয়েছে? অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান খান বলেন, তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের একমাত্র দল যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি”। আর এ কারণেই দলটি ভেঙেগ দিতে তারা তৎপর হয়েছে।
অনেক সমালোচকই মনে করেন, ইমরান খান ক্ষমতাসীন হবার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে উভয় পক্ষই এই অভিযোগ অস্বীকার করে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী সবসময় সামনে থেকে কিংবা পর্দার আড়ার থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে করেছে।
রাষ্ট্রযন্ত্র প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে গেলেও, আমাদের ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পর উপ-নির্বাচনে কীভাবে আমরা ৩৭টির মধ্যে ৩০টিতে জয়লাভ করলাম? সেনাবাহিনীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনাকারীদের আশা ছিল তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর তার দল দুর্বল হয়ে যাবে। সাধারণত কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতার বাইরে থাকলে এটিই ঘটে। কিন্তু যা ঘটেছিল তারপর উল্টো দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তারা সব ধরনের চেষ্টা করেছে। নারী ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীসহ তারা দশ হাজার মানুষকে জেলে ঢুকিয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যায় মদদ দেওয়াসহ প্রায় ২০০টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
গত মে মাসে আদালতের ভেতর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এতে কোথাও কোথাও সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য তিনি বৈরী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, তিনি এবং তার দল কখনও সহিংসতাকে সমর্থন করেননি এবং সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছেন। সামরিক ভবনগুলোতে হামলার ঘটনার সাথে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। একইসঙ্গে এই মামলাগুলো আলাদাভাবে তদন্ত করা দরকার। পুলিশের পরিবর্তে তাকে গ্রেপ্তারে সেনা পাঠানোর মতো ঘটনাই বিশৃঙ্খলা উস্কে দিয়েছিল। যখন সমর্থকরা দেখবে যে সেনাবাহিনী, একজন কমান্ডার আমাকে সেখান থেকে তুলে নিচ্ছে, তখন তারা কী করবে? সেখানে কি প্রতিবাদ হবে না?
লাহোর থেকে বিবিসির সাথে কথা বলার সময় ইমরান খান বলেন, সত্যি হল যে দেশ একটি বড় বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। আমার মনে হচ্ছে আমরা অন্ধকার যুগের দিকে যাচ্ছি। পাকিস্তানের একমাত্র সমাধান হল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এটিই এই বিশৃঙ্গখলা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায়। প্রস্তাবিত নতুন আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই আইন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যাপক পরিমাণে অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা দেবে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইমরান খান নতুন সরকারের একজন সোচ্চার সমালোচক হয়ে উঠেছেন।