রহমত নিউজ 27 October, 2022 03:23 PM
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খসড়া আইন দ্রুত পাশ করতে হবে।
আজ (২৭ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিজয়ী সাংবাদিকদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা, একটি সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিজয়ীরা হলেন, প্রিন্ট মিডিয়া বিভাগে শামীমুল হক, যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক মানবজমিন এবং মোহাম্মদ আল আমিন, সিনিয়র স্টাফ করেসপনডেন্ট, ডেইলি সান; অনলাইন মিডিয়া বিভাগে মোছাব্বের হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক প্রথম আলো; এবং টিভি রিপোর্ট বিভাগে আনোয়ার হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার, দেশ টেলিভিশন।ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস-সিটিএফকের সহায়তায় প্রজ্ঞা-প্রগতির জন্য জ্ঞান এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা যৌথ ভাবে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটিএফকের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের আইন সংশোধনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ অফিসের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আইন সংশোধনের গুরুত্ব তুলে ধরতে সাংবাদিকরা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
মানস সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, তামাক কোম্পানির কূটকৌশলে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমান আইনকে সংশোধনীর মাধ্যমে এফসিটিসি এর সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরে সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন ও এনজিও’র প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন। অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান মো: হাসান শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাবটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান সম্ভব নয়। একইভাবে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ না করা গেলে তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ছোবল থেকে রক্ষা করা যাবে না। বিশ্বের ৫০টি দেশ ইতোমধ্যে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। খসড়া সংশোধনীতে তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ সিএসআর এর নামে কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্র্যান্ড প্রচারের কাজ করে থাকে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এছাড়া ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এধরনের সকল পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভারতসহ অন্তত ৩২টি দেশ ইতোমধ্যে এসব পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। সংশোধনীর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে খসড়াটি এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে। তবে তামাক কোম্পানি সরকারের এই পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে নানাবিধ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নীতি প্রণয়নে তামাক কোম্পানির মতামত বিবেচনায় নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করেন। অসুস্থ ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরো কয়েক লক্ষ মানুষ। তামাকজনিত ব্যাপক মৃত্যু ও ক্ষতিরোধে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে কঙ্কালের মুখোশ পড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রতি সমর্থন জানায় প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের ইয়ুথ গ্রুপ।