| |
               

মূল পাতা জাতীয় সরকার বাংলাদেশে ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


বাংলাদেশে ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


রহমত ডেস্ক     07 September, 2022     04:37 PM    


বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সবচেয়ে উদার দেশ হিসেবে বর্ণনা করে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের এদেশের অবকাঠামো, শিল্প-কারখানা, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো, প্রকল্প, শিল্পকারখানা, জ্বালানি এবং পরিবহন খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব। ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কম সময়ে, সাশ্রয়ী ব্যয় এবং স্বল্প সম্পদে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়ের নিশ্চয়তাসহ বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারেন। বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি এবং ধারাবাহিক সংস্কার প্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে। আজ (৭ সেপ্টেম্বর) বুধবার নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলের বলরুমে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআই এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি-সিআইআই যৌথভাবে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য, মংলা এবং মিরেরশরাইতে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। আমি আজ এখানে উপস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সেখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনুরোধ করব। এটি দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য শুধুমাত্র ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতেই নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতেও রপ্তানি করতে সক্ষম হবেন। ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেয়ার এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বল্প খরচ এবং বিশাল ভোক্তা ভিত্তির সুবিধা নেয়ার সময় এসেছে। শিল্পের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং আমাদের কৌশলগত অবস্থানের পূর্ণ সুবিধা নিতে তারা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন এবং বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসার জন্য রোগী আসে। হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছে। তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং বিকাশ লাভ করবে। এ জন্য উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। এর মাধ্যমে আমরা এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও শান্তি আনতে সক্ষম হব।

তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়িক ইভেন্টে অংশগ্রহন দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আলোচনা ও ধারণা শেয়ার করার সুযোগ দেয়। আমি বিশ্বাস করি সফল উদ্যোগ নীতি নির্ধারক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের একে অপরকে জানার, ধারণার বিনিময় এবং নিজ নিজ অগ্রাধিকার, সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলি বোঝার সুযোগ করে দেয়। এই ইভেন্ট আশা করি আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ দুটির মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটাবে। সন্দেহ নেই যে কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এটি প্রতিষ্ঠিত সাপ্লাই চেইনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিসহ অনেক দেশ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। তবে এটি আনন্দের বিষয় যে চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। অনেক বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বর্তমানে বিশ্বের ৬তম অর্থনীতি ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং আইএমএফ ভারতকে ২০২১-২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি হিসাবে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশও ১৯৭১ সালে বিধ্বংসী মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে একটি সার্বভৌম, স্বাধীন দেশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য-সহায়তার ওপর নির্ভরতা থেকে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এখন চাল, শাকসবজি, শস্য ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশগুলির অন্যতম। অতীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বাংলাদেশ আজ দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাপী উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বাংলাদেশ বিশাল আর্থ-সামাজিক সাফল্য ও আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতক প্রবৃদ্ধি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭.০ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ২০০৯ সাল থেকে, মাথাপিছু আয় প্রায় ১,০০০ মার্কিন ডলার থেকে তিনগুণ বেড়ে আজ ২,৮০০ মার্কিন ডলারের বেশি হয়েছে৷ এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়ে ২১,০৩১.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এই সূচকগুলি বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিকে প্রতিফলিত করে।  গত দশ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারসাম্য অনেকটাই ভারতের পক্ষে ছিল। উন্নত উৎপাদন ক্ষমতার সাথে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত। তাই আমরা ভারতীয় আমদানিকারকদের বাংলাদেশী পণ্যগুলির দিকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য আমন্ত্রণ জানাই, যেগুলি তারা দূরের দেশগুলি থেকে উচ্চ মূল্যে আমদানি করছেন। বৃহত্তর লাভের জন্য, বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতাকে বাণিজ্যের বাইরে যেতে হবে। এতে বিনিয়োগ, অর্থ, পরিষেবা, প্রযুক্তি স্থানান্তর অন্তর্ভুক্ত এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে স্থাপন করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহের মোট পরিমাণ ছিল ১৩৭০.৩৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ভারত থেকে এর অনুপাত ছিল ১৫.৭৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা এফডিআই প্রবাহের মাত্র ১.১৫% । তাই নিশ্চিতভাবেই দ্বিমুখী বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুবিধা অর্জনের উপায় খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ি সম্প্রদায় এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলিকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের মধ্যে আরও সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।  বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে যা চলতি বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি ২১টি জেলাকে সরাসরি রাজধানী এবং দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক দশকে বাংলাদেশে আরও বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন-৬, এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং দীর্ঘতম পানির নিচের সড়ক টানেল কর্ণফুলি টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল এবং আরও কিছু মেগা-প্রকল্প। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে, তা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যথেষ্ট অবদান রাখবে।